শিশুদের অপুষ্টির কথা বিবেচনা করে দেশের ৬১ জেলার ৩০০ উপজেলার তিন শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বছরব্যাপী দুধ খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) আওতায় এসব বিদ্যালয়ের শিশুদের প্রতিদিন বিনামূল্যে ২০০ মিলিলিটার করে দুধ খাওয়ানো হবে। একদিকে পুষ্টি চাহিদাপূরণ অন্যদিকে পুষ্টিবিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাইলট প্রকল্পটি সফল হলে দেশের সব স্কুল ও শিশুকে এমন কর্মসূচির আওতায় আনা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার কিছু দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুলের শিশুদের গুঁড়া দুধ দেওয়া শুরু করে। ১৯৯৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলে খাদ্য কর্মসূচি চালু হয়। এ কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীদের চাল, ডাল ও নগদ অর্থ দেওয়া হতো। ২০০০ সালের পর থেকে এসবের বদলে ভিটামিনসমৃদ্ধ বিস্কুট দেওয়া হয়। ২০০২ সালে যশোরে বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর জন্য জরুরি সাহায্য হিসেবে বড় পরিসরে স্কুলে খাওয়ানো কর্মসূচি চালু হয়। ২০১০ সালে ডব্লিউএফপির সহায়তায় কর্মসূচিটি জাতীয় পর্যায়ে শুরু হয়ে চলে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হয়। তবে গত ১ জুলাই বন্ধ হয়ে যায় এ কার্যক্রম। এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় চালু হচ্ছে স্কুল মিল্ক ফিডিং কার্যক্রম।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের এক বছর প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০০ শিক্ষার্থীকে ১৬০ দিন দুধ খাওয়ানো হবে। যারা দুধ খায় এবং যারা খায় না তাদের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হবে। দুর্গম এলাকা ও দরিদ্র মানুষকেই এখানে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি শিশুদের উচ্চতা, ওজনসহ শারীরিক নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের জন্য উপজেলা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দুটি কমিটি কাজ করবে।
এ বিষয়ে এলডিডিপি প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. গোলাম রব্বানী বার্তা২৪.কমকে জানান, উদ্বোধনের পরেই অর্থাৎ মার্চ মাসের মধ্যে ৫০টি স্কুল, জুনের মধ্যে ১০০টি এবং ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো ৩০০ স্কুলে চালু করা হবে এ কার্যক্রম। তবে দেশের দুধ বিপননকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে এ কাজটি করতে হচ্ছে। এ কারণে একটু সময় লাগছে। আর স্কুলগুলো নির্ধারণ করে দিচ্ছে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তিনি আরও বলেন, গরুর দুধ আদর্শ পুষ্টিকর খাবার। তাই শিশুদের দুধ খাওয়া প্রতি আগ্রহ ও আকৃষ্ট করার পাশাপাশি নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে স্কুল মিল্ক ফিডিং শুরু হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২৬ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁওস্থ ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্কুল মিল্ক কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শম রেজাউল করিম। এর পর থেকে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে বাস্তবায়ন করা হবে।