ঐতিহ্য ফেরাতে গফরগাঁওয়ে ২৪ বছর পর লাফা বেগুন চাষ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ | 2023-11-29 15:40:17

ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার চরাঞ্চলে ২৪ বছর পর লাফা এবং তাল বেগুনের আবাদ বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল এলাকায় প্রান্তিক চাষিরা লাফা এবং তাল বেগুন আবাদ করে এখন লাভবান হচ্ছেন।

গফরগাঁওয়ের বেগুন স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় । এ বেগুনের আকৃতি গোল কিন্তু দেহ মসৃণ নয়। তাল বেগুনও দেখতে ঠিক লাফা বেগুনের মতো। কিন্তু এ বেগুন ঢেউ খেলানো খাঁজ কাটা নয়। সারা দেশে জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী গফরগাঁওয়ের বেগুন। অনেকেই একে গোল বেগুন বলে ডাকে। বড়া ও ভাজির জন্য প্রসিদ্ধ ও সুস্বাদু তাল বেগুন। এক সময়ে বিয়ের উৎসবে ঐতিহ্যবাহী লাফা বেগুন গফরগাঁওয়ের খাদ্যের তালিকায় না থাকলে বরপক্ষের খাবারে অপূর্ণতা থেকে যেত। এমন ঘটনা ঘটেছে, বরকে বড় থালায় খাবার দেওয়া হলে সেই থালায় লাফা বেগুনের ভাজা না থাকলে বর বিয়েতে অস্বীকৃতি জানাতো। 


গফরগাঁওয়ের লাফা বেগুন নিয়ে চাকরি প্রার্থীরা বড় কর্মকর্তার দরজায় হাজির হলে তাদের ভাগ্যে মিলে যেত চাকরি। নানা সমস্যার কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বেগুন চরাঞ্চলে কৃষকরা আবার আবাদ শুরু করেছেন। গফরগাঁওয়ের চরআলগী নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক গোলাম বর এবং ছামিদ মিয়া লাফা বেগুন চাষ করেছেন।

এক সময়ে গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় লাফা বেগুনের চাষ হতো। একটি বেগুনের ওজন হতো ২/৩ কেজি পর্যন্ত। কোন প্রকার সার প্রয়োগ ছাড়াই এ বেগুন উৎপাদন হতো।

লাফা বেগুনের ক্ষেতে কোন রকম অপবিত্র শরীর নিয়ে গেলে কয়েকদিন পরেই বেগুনের গাছ মরে যায়। ব্রক্ষপুত্র নদের ভাঙ্গনে লাফা বেগুন চাষাবাদের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। লাফা বেগুনের উন্নত বীজ কোথাও না পেয়ে কৃষকরা নিরূপায় হয়ে লাফা বেগুনের পরিবর্তে বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ করছে। এদের মধ্যে হলো- গোল আকৃতির লাফা বেগুন, তাল বেগুন, ভোলানাথ, সিংনাথ, ইসলামপুরী, বারী বেগুন, খটখটিয়া, তারা ও ঝুড়ি বেগুনের চাষ।

চরআলগীর কৃষক হামিদ মিয়া জানান,' বিলুপ্ত হওয়া লাফা বেগুনের বীজ অনেক কষ্ট করে ইসলামপুর থেকে সংগ্রহ করে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এক একর পঞ্চাশ শতাংশ জমিতে লাফা বেগুন চাষ করেছি। বেগুন চাষ করতে প্রায় ৯০ থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত বিক্রি করেছি প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার মত। চলতি মৌসুমে বাজারে ১ মণ বেগুন ৪ হাজার ৮'শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। দর ভাল থাকায় আশা করছি এ বছর প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকার উপরে বেগুন বিক্রি করতে পারব।'


কৃষক রিপন, গোলাম রব বলেন, লাফা বেগুন চাষের জন্য উন্নত বীজ না থাকায় এর বিকল্প হিসেবে আমরা ভোলানাথ ও ইসলামপুরী বেগুনের চাষাবাদ করছি। ইসলামপুরী ও ভোলানাথ বেগুন দেখতে অনেকটা লাফা বেগুনের মত, দামও ভাল। তবে খাওয়ায় স্বাদ কম। এবার চরআলগী ইউনিয়নের গোলাম রব ও হামিদ ২৪ বছর পর লাফা বেগুনের চাষ করে গফরগাঁও তথা ময়মনসিংহের ঐতিহ্য রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

লাফা বেগুন এর অপর চাষী জীবন মিয়া জানান, 'বংশানুক্রমিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে দু-একজন চাষী লাফা বেগুনের চাষ করেন। আগের মত আর এখন লাফা বেগুনের চাষ হয় না। ভরা শীত মৌসুমে চলে লাফা বেগুনের চাষ। রাতের শেষ প্রহরে মাটি ওলট-পালট করে দিতে হয়। প্রতি সপ্তাহে অল্প সেচ দিতে হয়। ভালো জাতের বেগুন গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণ রস টেনে নেয়। কৃষক জীবন মিয়ার দাবি জরুরী ভিত্তিতে লাফা বেগুনের ভাল বীজ সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা জানান চলতি মৌসুমে ৮'শ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের বেগুনের চাষ হচ্ছে। চরআলগী, টাঙ্গাব, দত্তের বাজার ও সালটিয়া ইউনিয়নে বেগুনের চাষ হয়ে থাকে। এই ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ১৬'শ পরিবার বেগুন চাষে সুফল ভোগ করবে। গফরগাঁওয়ের চরআলগী ইউনিয়নের কৃষকরা লাফা এবং বেগুন আবাদ করে বাংলাদেশে মধ্যে আবার গফরগাঁওয়ের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর