কুড়িগ্রামে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগেই মিলছে উত্তরপত্র

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম | 2024-02-28 12:30:48

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার শুরুর আগে হুবহু উত্তরপত্র পাওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে নাগেশ্বরী নিউ প্রতিশ্রুতি নামক বেসরকারি স্কুলের পরিচালক ও এক শিক্ষককে নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

একই সঙ্গে ওই কেন্দ্রের একটি কক্ষে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার হলে অতিরিক্তি উত্তরপত্র রেখে চলে যাওয়ায় হাসনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহছেনা আক্তারসহ দুই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন পরীক্ষা কেন্দ্র সুপার মোশারফ হোসেন।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এ ঘটনা ঘটে। নাগেশ্বরী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদ ও নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রূপ কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

একাধিক অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার এসএসসি পরীক্ষার ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের ওপর পরীক্ষা ছিল। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর আগে একটি উত্তরপত্রের ছবি কিছু অভিভাবকের মোবাইল ফোনে হোয়াটস অ্যাপ ম্যাসেঞ্জারে আসে। পরে ওই ছবিগুলো স্থানীয় সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারেও চলে আসলে ছবি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সাংবাদিকদের হাতে আসা ছবিটিতে দেখা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা ৫৩ মিনিটে গ্যালাক্সি এ-টুয়েন্টিফোর মডেলের একটি ফোন থেকে মঞ্জুর আলম নামে একজন এই ছবি তুলেছেন।

পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঞ্জুর আলম নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন নিউ প্রতিশ্রুতি স্কুলের শিক্ষক। পরে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা কচাকাটা কলেজের ড্যমোনেস্টটর শহিদুল ইসলাম ও শিক্ষক মঞ্জুর আলমকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

এছাড়াও একইদিনে নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের টয়লেট থেকে ভেজা উত্তরপত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীদেরকে সার্চ গেটের বাইরে এনে পুলিশ তাদের সার্চ করে। এ সময় এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়। পরে ওই পরীক্ষার্থীর বাবাকে ডেকে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

নাগেশ্বরী থানার ওসি রূপ কুমার সরকার বলেন, ছড়িয়ে পড়া উত্তরপত্রটিতে দেখা গেছে মঞ্জুর নামে একটি ফোন থেকে তোলা। পরে অভিভাবকদের মাধ্যমে জানা যায় মঞ্জুর নামের এক ব্যক্তি নিউ প্রতিশ্রুতি স্কুলের শিক্ষক। এ কারণে নিউ প্রতিশ্রুতি স্কুলের পরিচালক শহিদুল ইসলাম ও ওই স্কুলের মঞ্জুর আলম নামের শিক্ষককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। আপাতত দেখা গেছে ছবি তোলা ফোন এটি নয়। তারপরও তদন্ত চলছে।

এ বিষয়ে নিউ প্রতিশ্রুতি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল ইসলাম ও মঞ্জুর আলম বলেন, আমাদেরকে স্যারেরা (ইউএনও, ওসি) ডেকেছে। আমাদের কাছে যা যা জানতে চেয়েছে আমরা বলেছি।

একাধিক অভিভাবক এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেন্দ্রের ভেতরে কিছু পরীক্ষার্থীকে বেছে বেছে এসব উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়। শুরু থেকে এভাবে চলছে। কিছু শিক্ষক এর সঙ্গে জড়িত। তদন্ত হলে সব বেরিয়ে আসবে। আব্দুল কাদের নামে একজন অভিভাবক বলেন, আমি প্রতি পরীক্ষায় আমার নাতনিকে নিয়ে পরীক্ষা হলে যাই। বাইরে দেখি মাস্টাররাও নকল নিয়ে দৌড়া-দৌড়ি করছে। নাতনি প্রতিদিন বের হয়ে বলে ভেতরে অনেক স্যার নকল নিয়ে যায়।

তবে নাগেশ্বরী আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব মোশারফ হোসেন এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার প্রথম ‘স্মার্ট ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় কেন্দ্রের ৭ নং কক্ষের পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা সাফি মোল্লা নামের এক শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফোনটি জব্দ করা হয়েছে।’

নাগেশ্বরী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, পরীক্ষা শুরুর পর থেকে উত্তরপত্র ছড়াছড়ির বিষয়টি আমরা শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু কোথা থেকে উত্তরপত্র আসছে এটা বলা যাচ্ছে না। এটা নাগেশ্বরীর বাইরে থেকেও হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে সজাগ আছি।

নাগেশ্বরী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদ বলেন, পরীক্ষা কক্ষে স্মার্ট ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় এক শিক্ষককে চলমান পরীক্ষার সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। ফোনে পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনও তথ্য রয়েছে কী-না তা যাচাই করা হবে। আপত্তিকর কিছু পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও উত্তরপত্র ছড়ানোর সন্দেহে দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদেরও একটি ফোন জব্দ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর