ঢাকায় মাংস কাটার কাঠের গুঁড়ি ও পাটির বাজারে মন্দা

, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-06-16 11:12:20

কোরবানি শুরু হতে আর মাত্র ২৪ ঘণ্টারও কম সময় রয়েছে। কিন্তু কোরবানির মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত কাঠের গুঁড়ি এবং হোগলা পাতার পাটি বাজার মন্দার কথা জানিয়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।

মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ধারদেনার বিনিয়োগ করে চরম বিপাকে পড়েছেন। মুনাফা তো দূরের কথা মূলধন তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে কারণে ধার পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন তারা।

কল্যাণপুরে বিগত ১০ বছর ধরে পাটি ও খাটিয়ার ব্যবসা করে আসছেন মাহবুব মিয়া। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আগে কখনও এমন বাজার দেখিনি। আমি ৬টি ঢোপ (প্রতিটিতে ৪০টি) পাটি এনেছি, এখন পর্যন্ত ১টিও বিক্রি হয় নি। আবার মাংস কাটার খাটিয়া (কাঠের গুঁড়ি) বাজারও খারাপ। ২০০ খাটিয়া এনেছিলাম এখন পর্যন্ত ৫০টিও বিক্রি করতে পারিনি। অথচ অন্যান্য বছর আগের দিন থেকেই বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠতো। ঈদের আগের দিন বিকেলের মধ্যেই বেচাকেনা শেষ হয়ে যেতো।

মাহবুব মিয়ার পাশেই কাঠের গুঁড়ি ও পাটির পসরা সাজিয়ে বসেছেন আসাদুল ইসলাম। বেচাকেনা না থাকায় তারও মুখ মলিন। অন্য সময়ে সবজির ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলাম ধার করে ৪০ হাজার টাকার বিনিয়োগ করেছেন। এখন পর্যন্ত অর্ধেক পাটিও বিক্রি করতে পারেন নি। পাটি ও কাঠের গুঁড়ি নিয়ে মহা টেনশনে রয়েছেন। ঈদের চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিলেও ধারের টাকা পরিশোধ নিয়ে টেনশন মুক্ত হতে পারছেন না।

আসাদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, অর্ধেকের বেশি যদি বেচা না হয় তাহলে কি করব বুঝতে পারছি না। যেখান থেকে কিনে এনেছি তারাতো ফেরৎ নেবে না। আর এসব রাখবোই বা কোথায়।


তিনি বলেন, প্রতিটি পাটি কিনে এখানে আনতে ৮০ টাকার মতো খরচ পড়েছে। দেড় থেকে দুই’শ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এখন আরও কমে ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু তারপরও ক্রেতা নেই।

কম বিক্রি হওয়ার কারণ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুল ইসলাম বলেন, কোরবানির গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ কম কোরবানি দিচ্ছে। কারো কাছে হয়তো ১ লাখ টাকা আছে কিন্তু তাতে হচ্ছে না। আবার ঈদের আগে পরে শুক্রবার শনিবার থাকায় বেশি লোক গ্রামে গেছেন।

এক প্রশ্নের জাবে আসাদুল ইসলাম বলেন, ছেলে-মেয়ের জন্য নতুন কাপড় থাকলো দূরের কথা ঈদের জন্য যে একটু মাংস কিনবো সেই অবস্থা আর থাকলো না। ধারের টাকা ঈদের আগেই শোধ দিতে হবে। সেভাবে ওয়াদা দিয়ে নিয়েছি, এখন খুবই চিন্তা হচ্ছে। আগের বছর যারা ব্যবসা করেছে, তারা অনেক মুনাফা করেছে। তাই শুনে এই পথে নেমে ফেঁসে গেছি।

তেঁতুল কাঠের গুঁড়ি সদরঘাট থেকে আর হোগলা পাতার পাটিগুলো এনেছেন মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ থেকে। সাধারণত কল্যাণপুরের স্থানীয় বাসিন্দা ও গাবতলীয় থেকে কোরবানির পশু কিনে ফেরার পথে পাটি ও কাঠের গুঁড়ি নিয়ে যান। বেচাকেনা না থাকায় মৌসুমী এসব ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে।

প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী করোনা মহামারীর আগপর্যন্ত প্রতিবছর কোরবানি দেওয়া পশুর সংখ্যা বাড়ছিল। ২০১৯ সালে দেশে ১ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার ২৮১ পশু কোরবানি দেওয়া হয়। করোনার সংক্রমণ দেখা দিলে ২০২০ সালে কোরবানি সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩। পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে পশু কোরবানির সংখ্যা আরও কমে (৯০ লাখ ৯৩ হাজারের কিছু বেশি) যায়। তবে ২০২২ সালে কোরবানি দেওয়া পশুর সংখ্যা কিছুটা বেড়ে হয় ৯৯ লাখ ৫৪ হাজার ৬৭২টি। সবশেষ ২০২৩ সালে পশু কোরবানি দেওয়া হয় ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি।

গত ১৬ মে সাংবাদিক সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান বলেছেন, কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা এবার ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি, যা গতবারের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪টি বেশি। আর চাহিদার তুলনায় ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩টি বেশি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর