সিলেটে বন্যা: স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে নারী-শিশুরা

, জাতীয়

রাজু আহম্মেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম | 2024-06-21 17:14:14

সিলেট থেকে: ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তলিয়ে যাওয়া সিলেট নগরীতে এখনও কমেনি জলাবদ্ধতা। বন্যার প্রকোপে সিলেটের উপশহরসহ সিটি করপোরেশন এলাকায় এখনও ১৫টি ওয়ার্ড ডুবে আছে পানির নিচে। পাশাপাশি ১৩টি উপজেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে-এই বন্যায়৷ এতে নিরাপদ স্থান পেতে শিশুসহ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঠাঁই নিয়েছে প্রায় ২২ হাজার মানুষ।

সিলেট জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নগরীরসহ ১৩০টি ওয়ার্ড ও জেলার ১ হাজার ৬০২ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে নগরীর অর্ধলাখ লোক পানিবন্দি। জেলা ও নগর মিলিয়ে ৬২৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে নগরে ৮০টি।

এমন বন্যায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঠাঁই নেওয়া নারী ও শিশুরা ঝুঁকিতে আছে। বিশেষ করে শিশুদের নিরাপদ স্থান, নিরাপদ খাদ্য, পুষ্টি নিশ্চিত ও নিরাপদ স্যানিটেশন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সিলেটে।


সরেজমিন বেশ কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে দেখা গেছে, কোন প্রস্তুতি ছাড়াই ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে পরিবারগুলোকে। ফলে বসবাসের পর্যাপ্ত উপকরণ নেই আশ্রয় কেন্দ্রে। শিশুদের গোসল করানো বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে পারছেন না অভিভাবকরা।

একদিকে যেমন স্যানিটেশন সমস্যা অন্য দিকে শিশুদের নিরাপদ স্থান, ও পুষ্টিকর খাবার জোগাড় করতে পারছে না। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অন্তত ৭ হাজার শিশু রয়েছে। বন্যার প্রকোপে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ ও অস্বাস্থ্যকর নোংরা পানির প্রভাবে বিভিন্ন রোগ জীবাণুতে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা।

শিশুদের পাশাপাশি নারীরাও পড়েছেন বিপাকে। অতিরিক্ত মানুষের উপস্থিতিতে আশ্রয় কেন্দ্রে পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় বড় সমস্যার মুখে পড়েছেন নারীরা। নারী ও পুরুষ এক টয়লেট ব্যবহারের ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকিতেও ভুগছেন নারীরা। এছাড়া মেয়েদের ঋতুবর্তী সমস্যাও বড় প্রভাব ফেলছে বন্যা।


উম্মে কুলসুম নামের এক নারী জানান, ঈদের আগের রাতে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই বাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করে। কোমর সমান পানিতে বাচ্চাগুলো তলিয়ে যাচ্ছিলো। ওদের বাঁচাতে এই স্কুলে আসি। এখানে খাবার দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু বাচ্চাদের গোসল করাতে পারছি না। ঠিক মতো খাবার দিতে পারছি না। নাস্তা বানাবো সেটাও পাচ্ছি না। টয়লেট ব্যবহার করতে পারছি না আমরা। অনেক মানুষ কিন্তু এখানে দুইটা টয়লেট।

সিলেট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, বন্যায় শিশুদের ঝুঁকি অনেক বেশি। যেমন বন্যা পরবর্তী সময় শিশুরা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শ্বাস কষ্টজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শিশুদের পাশাপাশি নারীদেরও নানা সমস্যা হতে পারে। পেটের অসুধসহ বিভিন্ন রোগে তারা আক্রান্ত হতে পারে। তাই নিরাপদ ও সচেতন হতে হবে। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ পরিহার করতে হবে। নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবহার করা জরুরি।


২০ দিনের ব্যবধানে এ নিয়ে দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত সিলেটবাসী। এর আগে ২৭ মে সিলেট বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে আবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে সিলেট।

এর মধ্যে ঈদের দিন (১৭ জুন) ভোর থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারি বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় নগরীর অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর