বন্যায় তলিয়ে গেছে ঘর, ৫ সন্তান নিয়ে বিপাকে রোজিনা

, জাতীয়

রাজু আহম্মেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-06-22 11:56:08

সুনামগঞ্জ থেকে: ‘স্বামী ছেড়ে গেছে বহু বছর। ৫ ছেলে-মেয়ে নিয়ে পানিতে ডুবে মরতে ধরছিলাম। এলাকার লোকজন আমাকে বাঁচিয়েছে। তবে এ বাঁচায় আরও মরতেছি। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করি। দিন এনে দিন খাই। বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী সে ভিক্ষা করে আনে তা দিয়ে চলে পরিবার। এখন তো তাও হচ্ছে না। আমার সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। কেউ সাহায্য করে না।’

অশ্রু ভেজা চোখে কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুলতান পুর এলাকার রোজিনা বেগম। অভাবের সংসারে ৫ সন্তান রেখে চলে গেছে রোজিনার স্বামী তৈয়ব আলী। এরপর ৫ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন তিনি। দিন শেষে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা হয়। আর বড় মেয়ে সুলতানা ভিক্ষা করে হাল ধরেছে পরিবারের। এভাবে দৈন্যদশা নিয়ে কষ্ট করে চলছিল রোজিনার সংসার।


সুনামগঞ্জের আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে রোজিনার মাটির তৈরি ভাড়া বাড়ি। গলা সমান পানিতে থাকতে না পেরে সন্তানদের নিয়ে ঠাঁই নিয়েছে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রে। তবে ঠাঁই মিললেও দু বেলা খাবার জুটছে না পাঁচ সন্তানের এই জননীর। চিড়া মুড়ি খেয়ে চলছে তার জীবন।

রোজিনা বলেন, স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর ফিরে এসেছিল একবার। তবে আরও এক মেয়ে জন্মের পর একে বারেই ছেড়ে যায় আমাকে। তখন থেকে খুব কষ্টে না খেয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু গত ২২ এর বন্যায় আমার সব শেষ হয়ে যায়। বালিশ টাও বাঁচাতে পারিনি। সেগুলো ধীরে ধীরে কিনেছি। কিন্তু আবার ভেসে গেল। ভাড়া বাড়িতে থাকি। মাটির বাড়ি সব নষ্ট হবে। আবার আমাকে পরিচর্যা করতে হবে।


রোজিনা বলেন, আমার বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী। সে ভিক্ষা করে। দিন শেষে যা আনে তা দিয়ে সবজি কিনি। কিন্তু এই বৃষ্টিতে আমার মেয়েও বের হতে পারছে না। তাই তার রোজগারটাও বন্ধ। আমারও বন্ধ। চিড়া মুড়ি খেয়ে আর কতদিন থাকা যায়। আমরা তো গরিব। গরিবদের কেউ দেখে না। আমার ছেলে মেয়েকে বাঁচানোর জন্য হলেও আমাদের পাশে দাঁড়ান। আমাদের সাহায্য করুন।

রোজিনার মত অনেক করুন ইতিহাস নিয়ে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে আশ্রয় নিয়েছে ১৫৬ পরিবারের ৭০০ মানুষ। তাদের প্রত্যেকের জীবনের নেমে এসে অন্ধকার মেঘ। আয় রোজগার থেকে বিতাড়িত হয়ে সরকার ও স্থানীয় বিত্তশালীদের সহযোগিতার আশায় আছেন তারা।


বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯৯৫ মেট্রিকটন জি আর চাল, জি আর অর্থ সহযোগিতা ২২ লক্ষ, শুকনা খাবার ৫ হাজার ২৩৩ প্যাকেট এবং গো খাদ্য ও শিশু খাদ্যের জন্য ১৭ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে এই বরাদ্দের কত গুলো বিতরণ করা হয়েছে, তা এখনও জানা যায় নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর