ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার দুই স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানের সম্পদের হিসাব জমা দিতে চিঠি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) মতিউর রহমানের সম্পদ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানী টিম এই চিঠি দিয়েছেন।
যাদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন— মতিউর রহমান, তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, প্রথম স্ত্রীর মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা, প্রথম স্ত্রীর ছেলে আহাম্মেদ তৌফিকুর রহমান, দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলী, দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে ইফতিমা রহমান মাধুরী, দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত, দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে ইরফানুর রহমান ইরফান।
এবার কোরবানির ঈদে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়ে আলোচনার জন্ম দেন মতিউর রহমানের ছেলে ইফাত। তার পরই আলোচনায় আসে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ, আয় ও ব্যয়ের তথ্য। এনিয়ে খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খোদ এনবিআরও তার আয়কর রিটার্নে দেওয়া তথ্য খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়।
মূলত মতিউর রহমান কাস্টমস কমিশনার হিসেবে কর্মরত থাকার সময় থেকেই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দুদকসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে একাধিক আবেদন জমা পড়ে।
সাধারণ একজন চাকরিজীবী হয়েও এ পর্যন্ত শতকোটি টাকা সাদা করেছেন। বসুন্ধরায় দুই কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট এবং ধানমন্ডিতে ৫ কাঠায় আলিশান ৭ তলা বাড়ির মালিক। যার মূল্য ৪০ কোটি টাকা। ভালুকার সিডস্টোর এলাকার পাশেই প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর গ্লোবাল জুতার ফ্যাক্টরি। এ ছাড়া রয়েছে ৬০ শতাংশ জমি।
জেসিক্স নামে একটি যৌথ ডেভেলপার কোম্পানি রয়েছে। বসুন্ধরার ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবন আছে। গাজীপুর সদরে ৮টি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। তার স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় ১৪.০৩ শতাংশ, গাজীপুর থানার খিলগাঁও মৌজায় ৬২.১৬ শতাংশ জমি রয়েছে।
ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে ১৪.৫০ শতাংশ জমি আছে গাজীপুরে। যার মূল্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা। তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে আছে একাধিক দামি গাড়ি। তার নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫০ কোটি টাকার বেশি এফডিআর করা আছে। তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন। বিভিন্ন নারীর সঙ্গেও তার সম্পর্ক আছে।
ড. মতিউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্স বিষয়ে সম্মান ডিগ্রি এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রিস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ভ্যাট এবং কাস্টমস বিষয়ে দেশ-বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
ড. মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি ছিলেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। সেখান থেকে অধ্যাপনা ছেড়ে কোন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর হস্তক্ষেপে ও নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেবের সহযোগিতায় ২০২৩ সালে ১৯ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন।
২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস ছাদেক মারা যাওয়ার পর পদটি শূন্য হয়। পরে নিজেকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ঘোষণা দেন। দলীয় মনোনয়নও পান তিনি। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় দলীয় প্রভাব বিস্তার করে ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে ৬ প্রার্থীকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন লায়লা কানিজ লাকি।