ফেনীতে শাশুড়িকে ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়ে দেন মতিউর
![ডুপ্লেক্স বাড়ি](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/Jun/22/1719054019934.jpg)
ডুপ্লেক্স বাড়ি
ছাগলকাণ্ডে ভাইরাল মুশফিকুর রহমান ইফাতের নানার বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর এলাকায়। স্থানীয়রা বাড়িটিকে মিয়া বাড়ি হিসেবে চেনেন। দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর অনুরোধেই ফেনীতে ১০ বছর আগে একটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়ে উপহার দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য এবং কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান।
মতিউর রহমান ছেলে হিসেবে অস্বীকার করলেও মুশফিকুর রহমান ইফাত তারই ছেলে বলে নিশ্চিত করেছেন ইফাতের দুই মামা ও নিকটাত্মীয়রা। ইফাত ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর ভাগিনা। ইফাতের মা শিবলী নিজাম হাজারীর মামাতো বোন।
ফেনীতে শ্বাশুড়িকে উপহার দেয়া বিলাসবহুল বাড়িটি জসিম উদ্দিন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১০ থেকে ১২ বছর ধরে তিনি বাড়িটি দেখাশোনা করছেন। সর্বশেষ গত দুই মাস আগেও এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান, স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলী, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও শিবলীর মা বাড়িতে এসেছিলেন। কয়েকদিন থাকার পর আবার ঢাকায় ফিরে যান। মতিউর রহমানের শাশুড়ি ঢাকায় মেয়েদের বাসায় ও বাড়িতে আসা-যাওয়ার ওপর থাকেন। অন্য কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
সরেজমিনে সোনাগাজী উপজেলার সোনাপুর এলাকায় মিয়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়িটির সকল দরজা বন্ধ। সেখানেই দেখা হয় মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর জেঠাতো ভাই ও আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরণের সঙ্গে।
তিনি বলেন, এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমান তার চাচাতো বোনের স্বামী। ইফাত তাদের সন্তান। শাম্মী আখতারের ছোট ভাই ঢাকাতে ব্যবসা করেন। বিভিন্ন সময় মতিউর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ফেনীর সোনাগাজীতে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসতেন বলেও জানান তিনি। তবে শাশুড়িকে মতিউরের বিলাসবহুল বাড়ি উপহারের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, গত বছর কোরবানির ঈদে মতিউরের ছেলে ইফাত কোটি টাকা ব্যয় করে ১৪টি গরু-ছাগল কিনেছিলেন। এর মধ্যে আটটি গরু ও দুটি ছাগল ঢাকায় কোরবানি দিয়েছেন। বাকি চারটি গরু নানার বাড়িতে নিজে এসে জবাই করে আত্মীয়-স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, মতিউর রহমান ও তার শ্যালক নকিবের নামে ফেনী ও সোনাগাজীতে বেশ কিছু জমিজমা রয়েছে। যা মতিউরের স্ত্রী শাম্মী আখতারের জেঠাতো ভাই মো. আরিফুর রহমান তাদেরকে কিনে দিয়েছেন। তিনি এই সম্পত্তির দেখাশোনা করেন।
এ বিষয়ে মতিউরের স্ত্রী শাম্মী আখতারের জেঠাতো ভাই মো. আরিফুর রহমান বলেন, এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান তার চাচাতো বোনের স্বামী। মুশফিকুর রহমান ইফাত তাদের একমাত্র সন্তান। শাম্মী আখতারের এক বোন ও এক ভাই রয়েছে।
তিনি বলেন, ২৫ বছর আগে মতিউরের সঙ্গে শাম্মী আখতারের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর শাম্মী আখতারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মিল্লাত মিয়া মারা যান। এরপর শাম্মীর অনুরোধে মতিউর শাশুড়ি, শালিকা লাভলী আক্তার ও শ্যালক মো. নকিবকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে লাভলীকে পড়ালেখা শেষে বিয়ে দেন। আর শ্যালক মো. নকিবকে বাসায় রেখে লেখাপড়া করান। সম্প্রতি নকিব চীন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা ও চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তারা রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নিজস্ব বাসায় থাকেন।
তিনি আরও বলেন, মতিউর হঠাৎ করে একটি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় তিনি নিজেকে নির্দোষ ও আড়াল করতে স্ত্রী-সন্তানদের অস্বীকার করছেন। তবে এটা অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে। অন্যথায় ডিএনএ পরীক্ষা করলে ইফাতের বাবার পরিচয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এর আগে, গত বুধবার (১৯ জুন) মুশফিকুর রহমান ইফাতের সঙ্গে নিজের কোনো আত্মীয় সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য এবং কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান।
ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করে মতিউর রহমান বলেন, ইফাত নামের আমার কোনো ছেলে নেই। এমনকি আত্মীয় বা পরিচিতও নন। আমার একমাত্র ছেলে, তার নাম তৌফিকুর রহমান। একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। আমি এ বিষয়ে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহায়তা চেয়ে আইনি পদক্ষেপে যাচ্ছি। সামাজিক মাধ্যমে তার ছবি ও নাম ব্যবহার করায় বিব্রত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে পরিবারটির ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার কারণে মতিউর রহমান ছেলেকে অস্বীকার করছেন। কারণ ১৫ লাখের ছাগলকে কেন্দ্র করে ভাইরাল হওয়ার পর ইফাতের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপনের নানা বিবরণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবী বাবার বেতনের টাকা দিয়ে ছেলে কীভাবে এমন ব্যয়বহুল জীবনযাপন করতে পারে, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ছেলের পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
উল্লেখ্য, সাদিক অ্যাগ্রো বিটল প্রজাতির একটি খাসিটির দাম ১৫ লাখ টাকা চেয়েছিল। পরে মতিউর পুত্র মুশফিকুর রহমান ইফাতের সঙ্গে ১২ লাখ টাকায় বিক্রির চুক্তি হয় তাদের। তবে খাসিটির মূল্য ও এর ক্রেতাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়, মুহূর্তেই ভাইরাল হয় সেটি। এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে তার বাবা পরিচয় দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাসে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।