পেনশন স্কিম নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ, তদন্ত কমিটি গঠন

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল | 2024-07-03 11:01:57

সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির 'প্রত্যয়' স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) চলমান আন্দোলন কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে দুই গ্রুপ কর্মকর্তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন এলাকায় এ সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।

এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেলে রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শফিউল আলমকে আহ্বায়ক ও রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খোরশেদ আলম ও একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজ আলম। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে রেজিস্ট্রার বরাবর প্রেরণের জন্য বলা হয়।

ববিতে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের একপক্ষ সরাসরি কর্মকর্তা এবং অন্যপক্ষ ধীরে ধীরে প্রমোশন পেয়ে কর্মকর্তা হয়েছেন। যে কারণে প্রথম পক্ষের কর্মকর্তারা ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করে দ্বিতীয় পক্ষ থেকে নিজেদের পৃথক ও বড় দেখাতে চান বলে অভিযোগ দ্বিতীয় পক্ষ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তাদের। তারা উভয়েই সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যয় প্রত্যাহারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছিলেন। 

হাসপাতালে ভর্তিকৃতরা হলেন- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. তানজিম হাসান, সহকারী রেজিস্ট্রার তৌফিকুল ইসলাম রাহাত, সেকশন অফিসার মাহমুদুল হাসান, মিজানুর রহমান ও আবু সায়েম। অন্যদিকে ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও পরিকল্পনা দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর আবু হাসান, প্রকৌশল দপ্তরের উপপ্রধান প্রকৌশলী মুরশীদ আবেদীন, অর্থদপ্তরের ডেপুটি একাউন্টস অফিসার ইকবাল মিয়া এবং সহকারী রেজিস্টার আনোয়ার সাদাত হাসপাতালে ভর্তি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ব্যানার টানিয়ে কর্মবিরতি পালন করছিল। কিছু সময়ের পর ওই স্থানে ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন লেখা ব্যানার নিয়ে তা ঝোলাতে আরেকটি গ্রুপ সেখানে অবস্থান নিতে চায়। এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে দুই গ্রুপ মারামারিতে জড়িয়ে পরেন। পরবর্তীতে শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং পুলিশ এসে তাদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারের সভাপতি ও ববির অর্থ ও হিসাব বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক সুব্রত কুমার বাহাদুর বার্তা২৪.কমকে জানান, মঙ্গলবার কর্মবিরতি পালন করতে প্রশাসনিক ভবন (১ম) এর নিচতলায় ব্যানার নিয়ে যাই। এ সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা ওই ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে আরো একটি ব্যানার আনা হয়। সেই ব্যানারও তারা কেড়ে নিয়ে যায়। এরপর চেয়ার নিয়ে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় আমাদের ছয় কর্মকর্তা আহত হয়েছেন বলে জানান ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং ববির ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপ বার্তা২৪.কমকে জানান, তাদের সংগঠনটি বৈধ সংগঠন। সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে এবং তিনি অফিসার্সদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সভাপতি হয়েছেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা ৪টি সংগঠন বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখছে। হঠাৎ করে রাতারাতি একটি ব্যানার নিয়ে আরেকটি সংগঠন গড়ে উঠেছে। 

হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, তারা মঙ্গলবার আমাদের সাথেই কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েছেন। আকস্মিক তারা সংগঠনের নামে ব্যানার নিয়ে এসে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় অবস্থান নেয়। এ সময় তাদেরকে অন্যত্র সরে যেতে বললে তারা তাদের অবস্থানে অনঢ় থাকেন। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ওই সংগঠনের কর্মকর্তারা চেয়ার নিয়ে আমাদের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলা প্রতিহত করতে গেলে সংঘর্ষ হয়। এতে আমাদের পক্ষের ৪ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাপ।

বন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ.আর. মুকুল বার্তা২৪.কমকে জানান, ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রক্টর, শিক্ষক এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ, এ কারণে পুলিশ কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তবে প্রক্টর জানিয়েছে যাতে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য পদক্ষেপ নেবেন।

বিষয়টি নিয়ে বিব্রত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাইউম বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, হাতাহাতির আকস্মিকতায় আমিও হতভম্ব হয়েছি। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। এতে কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন। তবে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য উভয় গ্রুপকে নিয়ে বৈঠক করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর