'আদিবাসীদের ওপর নির্যাতনের খেলা বন্ধ করতে হবে'

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ঢাকা | 2024-09-21 18:39:48

আদিবাসীদের ওপর নির্যাতনের এই খেলা অচিরেই বন্ধ করতে হবে। যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে কিন্তু এর প্রেক্ষাপট ভাল হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও ক্রীড়া সম্পাদক উজ্জ্বল আজিম। 

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে এমন হুঁশিয়ারি দেন।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এক মাস না যেতেই বর্তমান সরকারের আমলে আদিবাসীদের ওপরে হামলা আমরা দেখতে পাচ্ছি, একের পর এক আদিবাসীদের ওপরে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। সরকারের কাছে তাই আমি আহ্বান রাখতে চাই, আপনারা দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। এই খেলা বন্ধ করেন। আমরা জানি একটা মহল চক্রান্ত করছে শান্ত পাহাড়কে অশান্ত করতে।

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই খেলা বন্ধ করতে হবে। আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের নিরাপত্তা দেয়া। সেজন্য আপনাদের কাছে আমাদের আহ্বান এই খেলা যাতে অচিরেই বন্ধ করা হয়। যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে কিন্তু এর প্রেক্ষাপট ভাল হবে না, ফল ভাল হবে না। ভুলে গেলে চলবে না, পাহাড়ের আদিবাসীরা আন্দোলন সংগ্রাম করতে জানে, রক্ত ঝরাতে জানে। আমরা সংগ্রাম করতে ভয় পাই না। দীর্ঘদিন এই দেশের আদিবাসীরা সংগ্রাম করেছে। এসময় তিনি ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান করেন। দেশের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজকে আদিবাসীদের পাশে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান তিনি।

সমাবেশে সংহতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য দীপ্তি দত্ত বলেন, আমাদের বিভক্তির রাজনীতি আরও প্রকট হচ্ছে। তিনি বলেন, পাহাড়ি ও বাঙালি একই দেশের নাগরিক। কিন্তু আমরা বিভিন্ন বিষয়ে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছি। এর বিরুদ্ধে আমাদের কোন অবস্থান নেই। বিভক্তিকে টিকিয়ে রাখার একটি রাজনৈতিক চেষ্টা সারা বাংলাদেশে চলছে।

দেড় মাস আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ৫ আগস্টের আগে যখন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছিলো তখন তারা আমাদের কাছে বার বার জানতে চাচ্ছিলো, আমাদের কে বাঁচান, আমাদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। কিন্তু এখন যখন পাহাড়িদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে এবং পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা যখন বলছে আমাদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে তখন কেউ দাঁড়াচ্ছেন না। এই বিষয়টি আমি খুব লজ্জার সঙ্গে বলতে চাই।

তিনি আরও বলেন, যে শিক্ষার্থীরা মাত্র কয়েকদিন আগে আমাদের বলছিলেন আমাদের পাশে দাঁড়ান তারা কেন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে সংগীত শিল্পী কৃষ্ণ কলি ইসলাম বলেন, এই ঘটনা খুবই অমানবিক। আমরা আপনারা যারা বাঙালি আছি তারা প্রকৃতি দেখতে যান কিন্তু সেখানকার মানুষের ওপর যে নির্যাতন বা আঘাত আসে সেগুলো নিয়ে আমরা কখনো তাকিয়ে দেখিনা। আমরা শুধু দেখতে যাই পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

তিনি বলেন, আমরা বাঙালিরা দেখি না যে আদিবাসীরা কি বলতে চাচ্ছে। তারা কিন্তু বার বার করে বলছে আমরা সেনা প্রত্যাহার চাই না, আমরা চাই সেনা শাসনের প্রত্যাহার। তারা বলছেন, আমরা স্বাধীনতা চাই না, সেটেলার বাঙালিদের অবসান চাই। এই বিষয়গুলা আমরা বাঙালিরা দেখি না। আমরা শুধু দেখি পাহাড়ের প্রকৃতি।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেসি (সেনাবাহিনী) ক্ষমতা থাকার পরও বাঙালি সেটেলাররা কিভাবে আদিবাসীদের ওপরে একচ্ছত্র নির্যাতন চালাতে পারলো সেটা আমাদের প্রশ্ন।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ডা. গজেন্দ্র নাথ মাহাতৌ বলেন, সরকার আসার পর আমাদের যে খুব ভাল বার্তা দিচ্ছে এটা মনে হচ্ছে না। তিনি পাহাড়ে শান্তি স্থাপনে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে গণমাধ্যমে যে সব সংবাদ এসেছে তা দেখে সুষ্ঠুভাবে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ঘটনাটির তদন্তে ও বিচার দাবি করেছেন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের ঢাকা মহানগর সভাপতি জন যেত্রা, গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লিয়ান রিছিল প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর