ঋতু বদলে বেড়েছে মশার উপদ্রব

খুলনা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, খুলনা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 13:18:40

প্রকৃতিতে ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে খুলনায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। রাতে মৃদু শীতল পরিবেশ আর দিনভর উত্তপ্ত আবহাওয়ার এ সময়ে মশার কামড়ে নগরজীবন অসহনীয় হয়ে উঠছে। দিনে কিছুটা কম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। মশার কামড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থী, শিশু ও বৃদ্ধরা। বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকার ড্রেন-নর্দমা অপরিচ্ছন্ন। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করায় জমে থাকা দূষিত পানিতে মশা বংশবিস্তার করছে। সেই সঙ্গে মরার উপর খাড়ার ঘা খুলনায় চলমান ওয়াসার উন্নয়নমূলক প্রকল্প।

মধুমতি নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে খুলনার নগরবাসীকে তা সরবরাহের বৃহৎ এ প্রকল্পের কারণে প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে প্রতিটি এলাকা, এমনকি অলি-গলিতেও চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে পাইপলাইন বসানোর এ কাজের কারণে অনেক স্থানের ড্রেন-নর্দমা পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মশার উৎপত্তি বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

নগরবাসীর অভিযোগ, নিয়মিত ড্রেন-নর্দমা পরিষ্কার না করা, মশার বংশবিস্তারের উৎপত্তি স্থলে সঠিকভাবে ওষুধ প্রয়োগ না করা ও মশা নিধন কার্যক্রম তড়িৎ গতিতে না হওয়ায় নগরীতে এর উপদ্রব বাড়ছে।

নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মাসুদ পারভেজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘একদিকে রাস্তা খোঁড়ার কারণে চলাচলে সমস্যা হয়, আরেকদিকে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হচ্ছি। দিনের বেলায়ও মশার কামড়ে কোথাও বসতে পারি না। এ কারণে নিত্যদিনের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। আমরা কবে যে এ দশা থেকে মুক্তি পাব ওপরওয়ালাই জানেন।’

খালিশপুরের বাসিন্দা নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নাহার সাদিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট আর ড্রেনগুলো অনেক অপরিচ্ছন্ন। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। বিকেল থেকেই মশায় ঘরভর্তি হয়ে যায়। দুপুরে দরজা জানালা আটকে রাখি, তারপরেও এতো মশা কোথা থেকে আসে বুঝি না। বাধ্য হয়ে মশারি টাঙিয়ে তার ভেতরে বসে পড়তে হয়।’

নাগরিক আন্দোলনের সংগঠন জনউদ্যোগ খুলনার আহ্বায়ক কুদরত ই খুদা বার্তা২৪.কমকে জানান, মশা নিধনে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) পদক্ষেপ দেখা যায় না। আগে বাড়িতে বাড়িতে মশার ওষুধ ছিটানো ও ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া দেয়া হতো। তা বর্তমানে দৃশ্যমান নয়। ফলে সন্ধ্যা হতেই মশারির মধ্যে ঢুকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। মশার অত্যাচার‌ে অতিষ্ঠ হচ্ছে সবাই। বড় অংকের বাজেট থাকার পরেও কর্তৃপ‌ক্ষের উদাসীনতাই জনসাধার‌ণের দুর্ভো‌গের কারণ। নাগরিক এ সমস্যা সমাধানে কেসিসি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।

তবে খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, নগরবাসীর অসচেতনতাই মশা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের আউটলেট উন্মুক্ত রাখা, ড্রেনে অপদ্রব্য ফেলে পানি সরবরাহ বন্ধ করা, ঝোপ-ঝাড়-বাগানে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার না করার ফলে মশার উপদ্রব বাড়ছে। এছাড়া শীত থেকে গরম আবহাওয়ায় পরিবর্তনের এ সময় মশার উপদ্রব কিছুটা বাড়ে।

খুলনা সিটি করপোরেশনের কনজারভেন্সি শাখার কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মশা নিধনে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। লার্ভিসাইড ও লাইট ডিজেল ছিটানোর পাশাপাশি ফগার মেশিন দিয়েও কার্যক্রম চালাচ্ছি আমরা। এছাড়াও উড়ন্ত মশক নিধনে ৩১টি ওয়ার্ডে ১০ জন করে তিনটি গ্রুপে ফগার মেশিন দিয়ে অ্যাডাল্ট্রিসাইড স্প্রে করা হচ্ছে। বর্তমানে মশার প্রজননের সময় চলছে। এ কারণে মশার উৎপাত বেড়েছে। ডিম নষ্ট করতেই ড্রেনগুলোতে লার্ভিসাইড ও লাইট ডিজেল স্প্রে করা হচ্ছে। দ্রুতই এ সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটবে। তবে আমাদের এতসব কার্যক্রমের মাঝেও সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো নাগরিকদের সচেতনতা।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর