ঝড় থামলেও থামেনি উপকূলবাসীর সংগ্রাম। ঝড়ের আঘাত এখনও চোখ রাঙাচ্ছে খুলনার উপকূল জুড়ে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে খুলনা উপকূলের ১১টি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে নোনা পানি ঢুকছে লোকালয়ে। উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় নদীর লবণাক্ত পানিতে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) সকালে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনার কয়রা উপজেলায় অন্তত ৭টি স্থানে পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙে এবং বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে ঢুকছে পানি, প্লাবিত হচ্ছে লোকালয়। ঝড় আর পানির প্রবল চাপে মুহূর্তেই প্লাবিত হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর, উপড়ে পড়েছে গাছপালা, তলিয়ে গেছে মাছের ঘের আর মৌসুমী সবজির ফসলের খেত। উপকূল ছাড়িয়ে লোকালয়ের অনেক স্থানেই পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দি আছে গ্রামবাসী।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর স্বাধীন সমাজকল্যাণ যুব সংস্থার সভাপতি আবু সাঈদ খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান খুলনার উপকূলে আঘাত হানার পরে রাতেই কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে লবণাক্ত পানি। কয়রার ঝুঁকিপূর্ণ আংটিহারা এলাকাসহ ১১টি পয়েন্টে নদীর পানির চাপ ও স্রোতের চাপে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢোকে। সকালে বাঁধ ভাঙার স্থানে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক বাঁধ আটকানোর চেষ্টা করেছি। কয়রায় ১৫টি গ্রামের ৫৬ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার হুমায়ুন কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ফলে নদীর পানি ফুসে ওঠায় আর পাউবোর বেড়িবাঁধ নাজুক অবস্থায় থাকায়— বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। আজ সকালে জোয়ারের পানি এসে কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের তসলিম মোল্যার বাড়ির সামনে, ছোট আংটিহারা গ্রামের বাকের গাজীর বাড়ি সংলগ্ন, দক্ষিণ আংটিহারা সু ইজ গেটের পূর্ব পাশ হতে মুক্তিযোদ্ধা গিরীন সরদারের বাড়ি পর্যন্ত, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাজীপাড়া এলাকা, কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা, মহারাজপুর ইউনিয়নের লোকা গ্রামের হামকুড়ুর গোড়া ও দশহালিয়া গ্রামের মজিবর মাস্টারের বাড়ি সংলগ্ন পাউবোর বেড়ি বাঁধ ভেঙে প্রায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ঘূর্ণিঘড় আম্পানের ফলে নদীর পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের থেকেও তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দ্রুত বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা চলছে।
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে কয়রার ৪৭টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই ঝুঁকির মধ্যে ছিল। বিভিন্ন ইউনিয়নে পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা যতদূর সম্ভব চেষ্টা করছি এসকল বেড়িবাঁধ অতি দ্রুত সম্ভব বাঁধ দেওয়ায়। সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।