দেশে ফিরতে সীমান্তে কাঁদছে ভারতীয়রা

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ | 2023-08-31 15:36:31

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার কালিয়াচক থানার গোলাপগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সমেনা বিবি। নিজের খালার মৃত্যুর খবর পেয়ে গত মার্চের ৭ তারিখ এসেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে। এটাই যেনো কাল হলো সমেনা বিবির। কারণ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বন্ধ দুই দেশের সীমান্ত পারাপার। তাই নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না স্বামী, সন্তান, সংসার ছেড়ে আসা সমেনা।

শুধু সমেনা বিবিই নয়, তার মত প্রায় ৪ হাজার ভারতীয় নাগরিক সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আটকে আছে। প্রতিদিনই সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন অফিসের সামনে এসে নিজ দেশে ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুনছে এসব দিশেহারা ভারতীয় নাগরিক।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) দেখা গেছে, প্রায় অর্ধশতাধিক অপেক্ষমাণ ভারতীয় নাগরিককে। অঝোরে চোখের জল ফেলছেন তারা।

অশ্রুসিক্ত চোখে সমেনা বিবি জানান, ৩ ছেলে-মেয়েকে রেখে এসেছি। সংসার ভাঙার উপক্রম। স্বামী বলছে আরেকটা বিয়ে করবে। আমরা ভারতের নাগরিক। নিয়মিত ট্যাক্স, ভোট দেয়। তাহলে নিজ দেশে কেনো যেতে পারবো না? গাড়ি চলছে, পণ্য আমদানি-রফতানি হচ্ছে, তাহলে আমাদের নিতে সমস্যা কোথায়? নিজের স্বামী-সন্তানের কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি আরো বলেন, দেশে না ফেরালে এখানেই জীবন দিয়ে দিবো।

মালদার বোস্টমনগর থানার গুলজারনগর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভোলাহাটে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে আটকে পড়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের জানিয়েছেন ৩১ তারিখ খুলবে, তবে এখনও সীমান্ত খুলেনি। ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। বউ-বাচ্চা ছাড়াই একটা ঈদ করেছি, আরেকটা ঈদ চলে আসলো। ঢাকা-কলকাতাগামী চাটার্ড বিমানের টিকিটও নিয়েছিলাম, সেটাও বাতিল হয়েছে।

দেশে ফিরতে সীমান্তে ভারতীয়দের ভিড়

মার্চ মাসের ৮ তারিখে পরিবারের সাথে ঘুরতে এসেছিলো নবম শ্রেণির ছাত্রী নূরনেসা। ১০ দিনের জন্য এসে ৪ মাস পেরিয়ে গেছে। নূর নেসা জানান, তখন কিছুই ছিলো না, তাই বই-খাতা নিয়ে আসিনি। সূর্যাপুরে যেখানে আমার স্কুল, সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ক্লাসে প্রশ্নপত্রও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমি আটকে পড়ায় এখানে পড়াশোনা হচ্ছে না।

প্রায় ১ মাস ধরে প্রতিদিন এখানে এসে বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করছি। খাওয়া-দাওয়ার কোনো খবর নেই। কেউ দুমুঠো খাবার নিয়ে এগিয়েও আসছে না। আজকাল বলে দিন পার করছে এখানকার অফিসাররা। বাড়িতে ছোট বোন, ফুফু মারা গেছে, তাও যেতে পারলাম না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন, মালদার কালিয়াচক থানার শ্বশানীবাড়ি গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ হবিবুর রহমান।

কালিয়াচক থানার সুজাপুর চামাগ্রাম এলাকার মো. আহসান আলী (৩০) বলেন, বাড়িতে ৩ ছেলে মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। ওখানে তারা অর্ধাহারে-অনাহারে দিন পার করছে। আমাদের সংসারটা কে চালাবে? এসময় তিনি দুই দেশের সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন ও মানবিক দিক বিবেচনায় সীমান্ত খুলে দেয়ার দাবি জানান।

এ বিষয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে সোনা মসজিদ ইমিগ্রেশন অফিসে কাউকে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও অফিসের মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে অবস্থিত ভারতের সহকারী হাই কমিশন অফিসের নাম্বারে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর