আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন পশুর হাটে গরু ওঠানো শুরু করেছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। নরসিংদীতে এবছর স্থায়ী পশুর হাট ছাড়াও প্রতি উপজেলায় থাকছে না আগের মতো অস্থায়ী পশুর হাট। এরইমধ্যে নরসিংদীতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু আসতে শুরু করেছে, কিন্তু সেই পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে না।
জেলার সর্ববৃহৎ পুটিয়া বাজারে গিয়ে গরু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ পর্যন্ত যেখানে যেখানে হাট শুরু হয়েছে, সেখানে শুধু পশু বিক্রেতারাই আসছেন। হাজার হাজার পশু উঠছে হাটে, কিন্তু ক্রেতা নেই। ব্যবসায়ী ও খামারি সবারই একই কথা লাভ চাই না, পুঁজি চাই।
গত শুক্রবার (১৭ জুলাই) নরসিংদীর বেলাবো পশুর হাটে দেখা গেছে, পুরো হাট পশুতে ভরপুর যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ক্রেতার তুলনায় বিক্রেতার সংখ্যা প্রায় ১০ গুণেরও বেশি । বেলাবরের এই হাটে শিবপুর শাষপুর থেকে ৩টি গরু নিয়ে এসেছেন আলতাব নামে এক ব্যবসায়ী। গরু নিয়ে সকাল ১০টায় বাজারে এসে দিন শেষে ১টি গরু বিক্রি করেছেন। তাও আবার আসল দামে।
তিনি জানান, এবার জেলার পুঠিয়া, হাতির দিয়া ও চরসিন্দুর পশুর হাটসহ বিভিন্ন হাট ঘুরেছি। ঘুরে যা দেখলাম এবার লাভ হওয়ার পথ দেখছি না। ১৫ বছর ধরে গরু ব্যবসা করে আসলেও এমন পরিস্থিতি আর দেখিনি। তাই এবার লাভের চিন্তা বাদ দিয়ে পুঁজির চিন্তা করছি।
শিবপুর উপজেলার ইটাখোলা মুনসেফেরচর গ্রামের কিবরিয়া গাজী নামে এক খামারি ৫টি গরু নিয়ে পুটিয়া পশুর হাটে এসেছেন। সারা বছর লালন পালন করে বড় করেছেন কিছু টাকা লাভের আশায়। কিন্তু এবার সেই লাভের আশা দেখতে পাচ্ছেন না তিনি। তার ধারণা, গো-খাদ্যের যে দাম এবং এদের পেছনে যে অর্থ খরচ ও পরিশ্রম, এবার সবই বিফলে যাবে।
তিনি আরও জানান, মাংসের দরে গরু বিক্রি করলেও লাভ হবে না। যারা মাংসের গরু পালন করেন তারা এতো বেশি খরচ করেন না। দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে লাভ বাদ দিয়ে পুঁজি আসলেই বাঁচি।
পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর পশুর হাটে একই উপজেলার নোয়াকান্দা গ্রাম থেকে ৫টি ষাঁড় গরু নিয়ে এসেছেন বাচ্চু মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে পশুর ব্যবসা করেন। তিনি জানান, এবার অস্থায়ী গরুর হাট আগের মতো জমবে না। গত বছর এমন সময় কোরবানির পশুর হাটে বেচাকেনার ধুম পড়তো। কিন্তু এ বছর এখনো তার কিছুই চোখে পড়ছে না। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যে সব ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে আসেন, তারা অনেকেই করোনাভাইরাসের কারণে পশু ক্রয় করেননি।
নরসিংদীর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: আসাদুজ্জামান জানান, জেলায় ৫ এর অধিক গরু পালনকারী খামারির সংখ্যা প্রায় ১৭শ ৩৭টি এবং ৫টির নিচে পারিবারিকভাবে গরু মোটাতাজা করেন এমন খামারি রয়েছেন ৪৭শ ১টি। এই বিপুল সংখ্যক খামারিরা কোরবানিকে কেন্দ্র করে গরু, খাসি ও মহিষ মোটাতাজাকরণ করে থাকেন। এবার খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা না এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবছর যেহেতু করোনার প্রাদুর্ভাব রয়েছে, তারমধ্যে কি পরিমাণ লোক কোরবানি দিবেন সেই বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা।