‘সবার জন্য নির্বাচনের পথ খোলা ছিল, তারা আসেনি- অগ্নিসন্ত্রাস করছে’

, রাজনীতি

রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-12-08 17:41:13

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের বাকি আর এক মাস। নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি সহ সমমনা দলগুলো। মহাজোটের সঙ্গে আসন নিয়ে চলছে লুকোচুরি, মান-অভিমানের খেলা। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে রয়েছে দেশি-বিদেশি চাপ। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার চোখ রাঙানি।

আর এইসব নিয়ে বার্তা২৪.কম এর সাথে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বার্তা২৪.কম এর স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রুহুল আমিন।

বার্তা২৪.কম: ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এখন খুবই সংবেদনশীল অবস্থানে। ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া, চীনসহ অনেক দেশের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনে। তাছাড়াও নির্বাচনের পরে আমেরিকা থেকে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে এমন গুঞ্জন রয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ কি ভাবছে?

বাহাউদ্দীন নাছিম: এখন কেউ ইচ্ছে করলেই আমাদেরকে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলতে পারবে না। ওই জায়গায় নেই। কারণ এটা শুধু আমাদের একার ইচ্ছের ওপর নয় তাদেরও ব্যাপার আছে, তাদেরও প্রয়োজন আছে। তাদের প্রয়োজন, আমাদের প্রয়োজন সব মিলিয়েই তো বিশ্ব। তবে হ্যাঁ, কেউ একটু বেশি শক্তিশালী, কেউ একটু কম শক্তিশালী। কিন্তু তারপরও সম্পর্কটা পারস্পরিক ও বহুপাক্ষিক। আমাদের অর্থনীতি যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে কেউ চাইলেই ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারবে না। তাহলে তো স্যাংশন দিয়ে তারা আগেই আমাদেরকে শেষ করে দিত।

নেগেটিভ চিন্তায় সমৃদ্ধ একটি অংশ সব সময় খারাপ কিছুই দেখে। ভালো কিছুর স্বপ্ন যারা দেখতে পারে না তারা এ ধরনের কথা বলে ও ছড়িয়ে বেড়ায়। এটাও কিন্তু এক ধরনের তথ্য সন্ত্রাস। এরা ভালো করেই জানে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পর্যায়ে আছে; আমরা একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছি। আমরা কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এরকম অপপ্রচারও হয়েছিলো, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনীকে আর নেয়া হবে না। চাইলেই কি সম্ভব? আমাদের সৈনিকরা পেশাগত দক্ষতা ও সাহসিকতা দিয়ে এক নম্বরে পৌঁছেছে।

বার্তা২৪.কম: সম্প্রতি উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে স্যাংশান ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বাংলাদেশেও কি এরকম কিছু হবার সম্ভাবনা আছে?

বাহাউদ্দীন নাছিম: সেখানে কোন দিয়েছে, কি কারণে দিয়েছে? সেটার ব্যাখ্যা কিন্তু দিতে হবে। সেখানে তারা বিজয়ী হতে পারে বা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করতে পারে- এমন দলগুলোকে নির্বাচন করতে না দিতে আইন করেছে। তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে তো এটা করা হয়নি। বাংলাদেশে তাদের নির্বাচন করার সমস্ত ধরনের সুযোগ দেওয়া আছে। এই অধিকার তাদের দেওয়া হয়েছে। তারা আসে নাই। উল্টো হামলা ও অগ্নিসন্ত্রাস করছে। তাহলে বাংলাদেশ আর কম্বোডিয়ার ঘটনা কি এক ঘটনা? এই সত্য জিনিসটা বাংলাদেশের মানুষদের সামনে তুলে ধরতে হবে।

বার্তা২৪.কম: বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য আওয়ামী লীগের কি কোন উদ্যোগ ছিলো?

বাহাউদ্দীন নাছিম: আমরা নির্বাচনে যাব, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব, জনগণের কাছে এই ঘোষণা দিয়েই তো সবাইকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়েছি। বাংলাদেশে যে সমস্ত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে তাদের সবার সপ্রণোদিত হয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে, জনগণের ম্যান্ডেড পাওয়ার জন্য। তারা জনগণের ম্যান্ডেড পাওয়ার চেষ্টা না করে সরকারকে উৎখাত করে নির্বাচনে আসতে চায়। এটা কি সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত? সাংবিধানিক নিয়মের বাইরে যা ইচ্ছা তাই বললে সেটা কেন দেশের মানুষ মেনে নেবে?

তারা নির্বাচনে আসবে বলে না গো ধরেছে। এখন তাদের তো হাতে পায়ে ধরে নির্বাচনে আনা যাবে না। অথবা লাঠিপেটা করে, পুলিশ পাঠিয়ে ধরে এনে জোর করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো যাবে না। এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। এখানে কি বলা হয়েছে নির্বাচনী দাঁড়ালে তাদের মনোনয়ন বাতিল করে দেওয়া হবে? অথবা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে গেলে তাদেরকে গ্রেফতার করে বন্দিশালয় পাঠানো হবে? এ ধরনের কোনো কর্ম হয়েছে?

বার্তা২৪.কম: এখনো কি বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ আছে?

বাহাউদ্দীন নাছিম: কিভাবে? ট্রেন তো এখন কক্সবাজারের আধুনিক স্টেশনে পৌঁছে যাবার পথে।

বার্তা২৪.কম: প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র বা ডামি প্রার্থী দাঁড় করিয়ে তৃণমূলে বিভক্তি সৃষ্টি করছে বলে বলছেন কেউ কেউ। এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে, মারামারিও হচ্ছে কোথাও কোথাও। দীর্ঘ বিভক্তি যেন সৃষ্টি না হয় এ নিয়ে আওয়ামী লীগ কি পদক্ষেপ নেবে?

বাহাউদ্দীন নাছিম: আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন করতে চাই। আমরা নির্বাচনে উৎসবের আমেজ তৈরি হোক- এটা চাই। ইতিমধ্যেই কিন্তু নির্বাচনের উৎসবমুখর আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। এটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাঁড়াবার সুযোগ সাংবিধানিক ভাবেই আছে। কোন জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছে। এমন অতীতেও দাঁড়িয়েছে। আমরা চাই জনগণের ভোটে, জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচিত হউক। তাতে করে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। কাউকে মনোনয়ন থেকে বা নির্বাচন থেকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া কোন উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি না। জনপ্রিয়তা যাদের বেশি তারা নির্বাচিত হবে, এখানে দোষের কিছু নেই।

বার্তা২৪.কম: নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় নৌকা ও স্বতন্ত্রের পক্ষে ভাগ হয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীরা। সে ক্ষেত্রে কর্মীরা কার সাথে থাকবে? নৌকা নাকি স্বতন্ত্রের পক্ষে?

বাহাউদ্দীন নাছিম: তারা তাদের পছন্দের দিকে মুভ করবে। এটা নিয়ে যেহেতু দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি এটার মানে কি? তার অর্থটা কি? এটা কিন্তু আমাদের নেতা কর্মীরা বুঝবে, বুঝে গিয়েছে। আপনাদেরকেও কিন্তু বুঝতে হবে।

বার্তা২৪.কম: সিনিয়র নেতাদের অনেকেই বলছেন, নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু আপনি বলছেন আমরা কোন ব্যবস্থা নেব না এই যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এ নিয়ে কি বলবেন?

বাহাউদ্দীন নাছিম: আমাদের মাঝে কোন বিভ্রান্তি নেই। কেউ যদি বলে থাকেন তাহলে- এটা তাকেই জিজ্ঞেস করবেন। আমাদের মূল স্পিরিট হলো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক। নির্বাচনের প্রায় তিন হাজারের মতো প্রার্থী প্রতিযোগিতায় আছে, তারা যদি নির্বাচন অংশগ্রহণ করে এটা ভালো না খারাপ? বেশি প্রার্থী যদি নির্বাচন অংশগ্রহণ করে যারা জনপ্রিয় তারা বিজয়ী হবে। অনেকে বেশি ভোট পাবে, অনেক কম পাবে এটাই তো স্বাভাবিক। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক কিন্তু দলের স্পিরিট সম্পের্কে লেছেন। সেটা পরিষ্কার। তা হলো ১৪ দলের যারা দাঁড়িয়েছে তাদেরকেও কিন্তু এই বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তারা যেন কেউ উইথড্র না করে।

বার্তা২৪.কম: ১৪ দলের শরিকদের আসন বণ্টনের দায়িত্ব আপনাদের দেয়া হয়েছে, বিষয়টা নিয়ে কতটুকু অগ্রসর হলেন?

বাহাউদ্দীন নাছিম: আমাদের আলোচনা চলছে। তাড়াতাড়ি শেষ হবে। আগে বলেছিলাম ১৬-১৭ তারিখের মধ্যে শেষ হবে। আমার মনে হয় তার আগেই শেষ হবে।

বার্তা২৪.কম:  শরিক দলগুলো আরও বেশি আসন চায়, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কি শরিকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন বণ্টন করবে?

বাহাউদ্দীন নাছিম: ব্যাপারটা এভাবে বলা ঠিক হবে না। এটা শুধুমাত্র প্রাপ্তি ও চাওয়া-পাওয়ার বিষয়। নির্বাচনে উইনেবল প্রার্থীকে গুরুত্ব দেয়া হয়। আমরা ১৪ দলকে বলেছি, উইনেবল প্রার্থীকে অবশ্যই গুরুত্ব দেয়া হবে।

বার্তা২৪.কম: গত তিন নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন আপনাদের শরিক দল ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এবার আপনাকে আসনটি থেকে প্রথমবারের মত নৌকা দেয়া হয়েছে। শরিকরা কতটুকু সহযোগিতা করছে নির্বাচনী মাঠে?

বাহাউদ্দীন নাছিম: এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্ষীয়ান নেতা মেনন (ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন) ভাইয়ের সাথে আমার আজকেও আলাপ হয়েছে। আমাদের সাথে শরিকদের ব্যক্তিগতভাবে ও দলগতভাবেও ভালো সম্পর্ক আছে। সবকিছুই সুন্দরভাবে সমাপ্ত হবে। এটা নিয়ে নতুন কোন ভাবনা, আশঙ্কা নাই।

বার্তা২৪.কম: ঢাকা-৮ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। জয়ী হলে এলাকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কি পদক্ষেপ নেবেন?

বাহাউদ্দীন নাছিম: আমি দলীয় কাজ করার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সাথেও বসতেছি। তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে, মানুষের মাঝে উচ্ছ্বাস আছে। আওয়ামী লীগের যারা মাঠের কর্মী, তৃণমূলের কর্মী তারা খুবই আনন্দিত ও খুশি। আমি নিজেকে যোগ্য লোক আমি মনে করি না। তবে বুঝতে পারছি এখানে বিজয়ী হতে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। আরও একটা বিষয় আমার মনে হচ্ছে, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসবে। দল মত নির্বিশেষে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আমাকে ভোট দেবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর