বিসিবি জরুরি বৈঠকে বসেছিল মঙ্গলবার দুপুরে।
তবে মঙ্গলবার আপাতত ক্রিকেটের জন্য কোনো ‘মঙ্গলবার্তা’ নিয়ে এল না। বরং যা নিয়ে এলো তার নাম-‘ঝড়োবার্তা’!
পুরো বিশ্ব দেখল একটি দেশের ক্রিকেট বোর্ড কিভাবে তাদের পুরো জাতীয় দল এবং প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারদের ‘বিপক্ষ’ বানিয়ে ফেলে। এক অর্থে বিসিবি সাকিব, তামিম, মুশফিক, ইমরুল, মিরাজদেরসহ পুরো দেশের ক্রিকেটারদেরকেই যেন প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলল!
২৪ অক্টোবর থেকে জাতীয় ক্রিকেট লিগের তৃতীয় পর্ব শুরু হওয়ার কথা। দেশের প্রথম শ্রেণীর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ লিগ এটি। ২৫ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ দলের ভারত সফরের জন্য ক্যাম্প শুরুর কথা। এটাই ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট সফর।
অথচ সবকিছুই এখনো গভীর অনিশ্চয়তায়। জাতীয় লিগের তৃতীয় পর্ব যে নির্ধারিত তারিখে হচ্ছে না তা নিশ্চিত প্রায়। কারণ এখনো সব ক্রিকেটার ঢাকায়। অথচ খেলা খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রামে। ২৫ অক্টোবর ভারত সফরের জন্য টি-টোয়েন্টি দলের ক্যাম্প হবে কিনা-তাও কারোর জানা নেই।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এই প্রসঙ্গে যা বললেন, তাতে যা মিলল তার নাম-রাগের প্রকাশ! অনুযোগ! আক্ষেপ! নাজমুল বলছিলেন-‘খেলোয়াড়রা খেলতে না চাইলে তারা খেলবে না। কিন্তু এই না খেলার সুবিধাটা কী হবে? আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বার্থে যে কারোর সঙ্গে কথা বলতে রাজি আছি। আমাদের অনুশীলন ক্যাম্প শুরু হতে যাচ্ছে। খেলোয়াড়রা যদি এতে অংশ নেয়, তবে ভাল। কিন্তু তারা যদি ক্যাম্পে যোগ দিতে না চায়, তাহলে আমার বলার কিছু নেই! তারা আমাদের সঙ্গে যে কোনো সময় আলোচনায় বসতে পারে। আমার মনে হয় তারা অনেক মিথ্যে তথ্য দিচ্ছে এবং মিডিয়াসহ অনেককেই ভ্রান্ত করছে।’
আলোচনার দুয়ার খোলা রেখেছেন নাজমুল। আবার সেই সঙ্গে রাগও দেখাচ্ছেন। তাতেই পুরো বিষয়টা এখন যে পরিস্থিতির মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে তাতে ‘মান ভাঙ্গাতে’ কে আগে এগিয়ে আসবে- সেটাই প্রশ্ন।
ক্রিকেটাররা বিসিবি সভাপতি বা পরিচালকদের ফোন ধরছেন না বা ফোন বন্ধ রাখছেন- পরিস্থিতি যখন এমন, তখন এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে এই বরফ সহজে গলছে না!
ক্রিকেটাররা যে দাবির কথা জানিয়েছেন সেটা তো নেহাৎ দাবি নয়, সেটা তাদের অধিকার, প্রাপ্য ন্যায্যতা। অবাক করার বিষয় হলো ক্রিকেটারদের এই দাবির প্রায় সবগুলোই যৌক্তিক- সেটা মানছেন বিসিবির পরিচালকরাও। কিন্তু ক্রিকেটার এবং বিসিবির মধ্যে আকস্মিক জমাট হয়ে উঠা বরফটা ভাঙ্গবে কিভাবে সেই সমাধানই যে এখনো মিলছে না। ওদিকে ভারত সফরের সময়ও যে হয়ে এল!
মঙ্গলবার রাতে বিসিবির পরিচালক আকরাম খান বার্তাটোয়েন্টিফোরকে জানান-‘আমি সত্যিই অবাক হচ্ছি! এখন পর্যন্ত আমি মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিবকে ফোন দিয়েছি। কিন্তু তারা কেউ আমার ফোন ধরেনি। কলব্যাকও করেনি। ঠিক বুঝতে পারছি না, কথা না বলার কারণ কী? মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে কেন তারা আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করবে? কথা না বললে কি এমনসব বিষয়ের সমাধান হয়?’
ক্রিকেটাররা সাংবাদিকদেরও ফোন ধরছেন না। বিসিবি যে আলোচনার জন্য দরজা খোলা রাখার প্রস্তাব দিয়েছে সেটা তারাও জানেন। তবে এখন পর্যন্ত ক্রিকেটাররা তাদের আগের অবস্থানেই অনড়। তারা চান-বিসিবি ১১ দফা দাবি মেনে নিয়েছে, এটা জানিয়ে দিক। আমরাও ক্যাম্পে ফিরবো।
তবে যতই সময় যাচ্ছে বিসিবি বনাম ক্রিকেটারদের এই ‘আনস্পোর্টিং ম্যাচের’ সম্পর্কটা আরো তেতো হচ্ছে!
বিসিবিকে বুঝতে হবে এটা বড় সমস্যা। সমাধানটাও হওয়া চাই এবং সেটা অবশ্যই দ্রুত।
আরও পড়ুন-
ক্রিকেটারদের ধর্মঘটে ফিকার সমর্থন, কোয়াবের সদস্যপদে লাল কালির দাগ!
ক্রিকেটারদের ধর্মঘটে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন বিসিবি সভাপতি
হঠাৎ বিদ্রোহী ক্রিকেটাররা, সব ধরনের খেলা বয়কট
যে ১১ দফা দাবিতে ক্রিকেটাররা ধর্মঘটে
ব্যাকফুটে থাকা বিসিবি এখন রক্ষণাত্মক!
ক্রিকেটারদের দাবির সঙ্গে আছেন মাশরাফিও
সৌরভ আশাবাদী বাংলাদেশ আসবে, কথা বলবেন বিসিবির সঙ্গে