সম্প্রীতির নতুন আলোয় রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়
সাত বছরেও শেষ হয়নি রামু-উখিয়ার বৌদ্ধ বিহার ও পল্লিতে চালানো নারকীয় হামলার বিচার। সাক্ষীর অভাবে বিচার প্রক্রিয়া থমকে আছে। তবে রামু-উখিয়ার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ অনেকটাই স্বস্তিতে ফিরেছেন। তৈরি হয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নতুন বন্ধন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার, ৩০টি বসতঘর, পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া ও টেকনাফে ৭টি বৌদ্ধ বিহার, ১১টি বসতঘর পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পুড়ে যায় এসব মন্দিরে থাকা হাজার বছরের পুরাতাত্ত্বিক সব নিদর্শন। লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয় আরো ৬টি বৌদ্ধ বিহার, অর্ধশত বৌদ্ধ বসতঘরে।
তবে, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা উদ্যোগের কারণে ইতিমধ্যে সেই চির ধরা ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আবারো জোড়া লেগেছে। হারানো সেই সব বৌদ্ধ স্থাপনা আবারো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। পোড়া মন্দিরে তৈরি হয়েছে নান্দনিক স্থাপনা। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা শৈলীতে পূণ্যার্থীদের পাশাপাশি বাড়ছে পর্যটক আকর্ষণ। ক্ষতিগ্রস্তরা পেয়েছেন নতুন ঘর। এখন নিরাপত্তায় সতর্ক প্রশাসন।
রামুর কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের পাশেই বাড়ি শ্যামল বড়ুয়ার। সেদিন দেখেছেন দুর্বৃত্তদের চালানো তাণ্ডব। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, সেই সময় যা হারিয়েছি সব ফিরে পেয়েছি। আমাদের ধর্মীয় যত স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাও ফিরে পেয়েছি। তবে মামলার আসামিদের শাস্তি না দেখা পর্যন্ত ভয় থেকেই যাচ্ছে।
রামুর আরেক বাসিন্দা নীতিশ বড়ুয়া বলেন, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর আদালতের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি জড়িতদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে সুপারিশ করে। কিন্তু ঘটনার পরিকল্পনাকারী গডফাদারদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিকে আটক করে এসব মামলা দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। আবার অনেক সাক্ষীর নাম-ঠিকানাও লেখা হয় ভুলভাবে। তাই আটক সবাই পেয়ে গেছে জামিন। দায়ীরা রয়েছে এখনও অধরা।
কক্সবাজার পিপলস্ ফোরামের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বর্তমান সরকার রামুর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো আজ নান্দনিকভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে এখন পর্যটকরা ভ্রমণ করছে। এটি শুধু বর্তমান সরকারের কারণেই হয়েছে।
কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, রামু সহিংসতার ঘটনা দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে যে আঘাত হেনেছিল তা অনেকটা দূর হয়েছে। তবে সম্পূর্ণভাবে আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া সময়সাপেক্ষ। রামু সহিংসতার সাত বছরে ফিরে এসেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। রামুর বৌদ্ধরা পেয়েছে দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহার। কিন্তু রামুর ঘটনার পর যেই মামলাগুলো হয়েছে সেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে এখনো রয়েছে সংশয়।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে গুজবের জেরে রামুর ঘুমন্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয় একদল দুর্বৃত্ত। ভাঙচুর করা হয় শত বছরের মূর্তি ও মন্দির। আগুনের লেলিহান শিকায় চাপা পড়ে যায় রামুর ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা ১৮ মামলায় ১৫ হাজার ব্যক্তিকে আসামি দেখানো হয়। এজাহারে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৩৭৫ জনের। তারমধ্যে ১৮ মামলার চার্জশিটে আসামি করা হয় ৯৪৫ জনকে।
আরও পড়ুন: রামু ট্রাজেডির ৭ বছর