ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জ্যাম, ঘাম ও শ্রমের গল্প
-
-
|

ঘুটঘুটে অন্ধকারে অপেক্ষমাণ গাড়ির দীর্ঘ সারি
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত আড়াইটা। মাথার ঠিক উপরে চকচকে চাঁদ, যেন বিশাল অন্ধকারে এক টুকরা হীরা। ভ্যাপসা গরমে চারদিকে হাঁসফাঁস উঠে গেছে। নেই একটুও বাতাস।
এমনি পরিবেশে বসে আছি মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে ২ কিঃমিঃ দূরে সড়কের পাশের একটি টং দোকানে।
গাড়ির চাকা নড়ে না। অধাঘণ্টায় মাত্র ১০০ গজ সামনে এগিয়েছে ঘাটের দিকে। এখানকার সড়কে এমন দৃশ্য নিত্যরাতের। কখনো কখনো গাড়ির সারি ১০-২০ কিঃমিঃ পর্যন্ত দীর্ঘ হয়।
কথায় আছে কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ফেরির জন্য গাড়িতে যখন যাত্রীরা বসে অপেক্ষার প্রহর গোনে তখন অপেক্ষমাণ যাত্রীদের লক্ষ্য করেই সড়কের দুপাশে জমে ওঠে ভ্রাম্যমাণ বাজার।
ঝালমুড়ি, ডিমসেদ্ধ, পরোটা ভাজি, আখের শরবত, ডাবের পানি, গরম চা, আপেল, কমলা, আঙ্গুর ইত্যাদি নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা।
ফেরিঘাট থেকে গাড়ির সারি যত দীর্ঘ হয় তাদের মুখের হাসিও যেন ততই চওড়া হয়। রাত গভীর হলেও চোখে ঘুম নেই, আটকে পড়া যাত্রীদের লক্ষ্য করেই তাদের যত ব্যস্ততা।
রাস্তার পাশে ভ্যানে আপেল বিক্রি করছিলেন কালাম মিঞা। প্রতিকেজি আপেল ১৪০ টাকা, কমলা ১১০ টাকা। তার কাছে জানতে চাই, বেচাবিক্রি কেমন চলছে? মুচকি হেসে তার সংক্ষিপ্ত উত্তর, এই তো টুকটাক চলছে।
এরই মধ্যে একজন নারী ক্রেতা এলেন। দামাদামি করে এক কেজি আপেল কিনে নিলেন তিনি।
এখানে আখের শরবত ১০ টাকায়, ডাবের পানি ৩০ টাকা, হাফ লিটার মিনারেল ওয়াটার ২০ টাকা, পরোটা ১০ টাকা, ডিম পরোটা ৩০ টাকা, ভুনা ডিম খিচুরী ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
মধ্যরাতে এসব ভ্রাম্যমাণ দোকানের খাবার খেয়েই শত শত গাড়িতে অপেক্ষমাণ হাজার হাজার যাত্রী তাদের ক্ষুধা মিটিয়ে থাকেন।
কুষ্টিয়া শহরে বসবাস মোহাম্মদ সিরাজের। ঢাকা থেকে এ পথেই নিয়মতি যাতায়াত করেন তিনি। তার কাছে জানতে চাই, সড়কের এই দৃশ্য কি নিত্যরাতের? তার ঝটপট উত্তর, সবসময় এমনটাই দেখে আসছেন তিনি। রাতেই বেশি জ্যাম থাকে সড়কের একপাশে।
একটা খুপড়ি দোকানে পরোটা বিক্রি করছিলেন সেলিম। দিনে কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি রাতে দোকানে এসে পরোটা বিক্রি করেন তিনি।
সেলিম বলেন, দিনের বেলা আব্বায় দোকান করে, রাতে আমি বসি। দিনের চেয়ে রাতের বেচাকেনা বেশি হয়।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়িতে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র ১২৯তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী লালন উৎসব।
সে উৎসবে যোগ দিতে সড়কপথে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছি রাত ১২টায়। সোয়া দুটোয় গাড়ি এসে থামে ফেরিঘাটের অদূরে। রাত সাড়ে তিনটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গাড়ি আরো ১০০ গজ সামনে এগিয়েছে। আমার মতো অনেক যাত্রী ফেরিঘাটের দিকে দলবেঁধে হেঁটে চলেছেন। অনন্ত সে পথযাত্রা!