অভয়াশ্রমে বিপন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অভয়াশ্রমে বিপন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

অভয়াশ্রমে বিপন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

দিন দিন কমে আসছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। নানা কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা। বাড়ছে নদী ও পুকুরের পানি দূষণ। এতে করে মাছের অবাধ বিচরণ, প্রজনন ও জীব-বৈচিত্র্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এ অবস্থায় বিপন্ন ও প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ সংরক্ষণসহ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি অর্থায়নে রংপুরে মাছের একাধিক অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে।

আট উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত রংপুর জেলায় গড়ে তোলা অভয়াশ্রমের আয়তন পাঁচ হেক্টর ছাড়িয়েছে। বর্তমানে এগারোটি অভয়াশ্রমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যসহ বিপন্ন প্রায় মাছের প্রজাতি সংরক্ষণ, অবাধ বিচরণ, প্রজনন ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করছে মৎস বিভাগ। ডিসেম্বর নাগাদ আরও দুটি অভয়াশ্রম যুক্ত হবে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে।

বিজ্ঞাপন

রংপুর জেলা মৎস জরিপ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ২০০৭ সাল থেকে মৎস বিভাগ মাছের অভয়াশ্রম নিয়ে কাজ করছে। এই কার্যক্রমে জলাশয়ে মাছের উৎপাদন এখন ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা মৎস অভয়াশ্রমে প্রায় দেড় হাজারের মত সুবিধাভোগী রয়েছে। জলাশয়ের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি অভয়াশ্রমের সুফলভোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে।

এই কর্মকর্তার মতে, মাছের আশ্রয়স্থল ও প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে অভয়াশ্রমগুলো কাজ করছে। এসব অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হওয়ায় আশ্রয় নেওয়া মাছের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। সরকারি রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি জনসচেতনতা ও দায়বদ্ধতা বাড়লে হুমকির সম্মুখীন দেশীয় মৎস প্রজাতিকে রক্ষা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে জেলার বেশ কয়েকটি অভয়াশ্রম ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির বিভিন্ন মাছসহ বিপন্ন ও দুর্লভ প্রজাতির ভাঙ্গনা, জাত পুঁটি, তিত পুঁটি, চাঁন্দা, কাকিলা, গুচি-বাইম, শিং, মাগুর, রানি মাছ, ভেদা, টেংরা, কাজলি, রিটা, টাকি ইত্যাদি মাছের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বড় প্রজাতির মধ্যে আইড়, ফলি, চিতল, গজার, শোল ইত্যাদি মাছের পুনরাবির্ভাব লক্ষ্য করা গেছে।

বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ২’শ ৬৩টি মিঠাপানির মাছের প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬৪ প্রজাতি হুমকির সম্মুখীন। এই ৬৪টি প্রজাতির মধ্যে নয়টি অধিক বিপন্ন। ৩০টি বিপন্ন এবং ২৫টি বিপদাপন্ন। এসব হুমকির সম্মুখীন দেশীয় মাছ রক্ষা ও সংরক্ষণে অভয়াশ্রম একটি পরিবেশবান্ধব ও কার্যকরী ব্যবস্থাপনা কৌশল বলে জানান রংপুর জেলা মৎস কর্মকর্তা বরুণ চন্দ্র বিশ্বাস।

বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে এই মৎস কর্মকর্তা বলেন, মাছের অভয়াশ্রম থেকে ধারাবাহিক সুফল পাওয়ার জন্য সরকারি রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি জনসাধারণের সচেতনতা বেশি প্রয়োজন। ইতোমধ্যে সরকারি অর্থায়নে মৎস সংরক্ষণ, প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১১টি অভয়াশ্রয় গড়ে তোলা হয়েছে।

এগারোটি অভয়াশ্রমের মধ্যে পীরগঞ্জ উপজেলাতে তিনটি এবং মিঠাপুকুরে দুইটি রয়েছে। এছাড়া রংপুর সদর, কাউনিয়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, পীরগাছা ও গংগাচড়া উপজেলায় একটি করে অভয়াশ্রম আছে। এসব অভয়াশ্রমের মোট আয়তন আট দশমিক পাঁচ হেক্টর। সুবিধাভোগীর সংখ্যা এক হাজার ২’শ জন। এবছরের শেষের দিকে আরও দুটি অভয়াশ্রম গড়ে তোলার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও তিনি জানান ।