যেমন কাটছে সাঁওতালদের দিনকাল
সাহেবগঞ্জ (বাগদা) সাঁওতাল পল্লী থেকে: নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ (বাগদা) সাঁওতাল পল্লীর তিন শতাধিক আদিবাসী পরিবার। মাঠে কাজ নেই, ফলে বেকার হয়ে রয়েছেন। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।
সাহেবগঞ্জের (বাগদা) এ পল্লীতে বসবাস ছিল প্রায় আড়াই হাজার সাঁওতাল পরিবারের। ১ হাজার ৮৪২ একর জমি নিয়ে রংপুর সুগার মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাঁওতালদের বিরোধ চলে আসছিল দীর্ঘ দিন ধরে। এই জমি দখল নিয়ে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে তিনজন আদিবাসী নিহত হয়। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে উচ্ছেদ করে দেয়া হয় তাদের। এরপর সাওতাল পরিবারগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।
সাঁওতাল এই পল্লীতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়া নেই। বাসস্থানের অবস্থাও খুব নাজুক। খড়-কুটো দিয়ে নির্মাণ করা ঝুপড়ি ঘরেই এখন রাত কাটায় তারা। বেশ কয়েক বছর আগে খ্রিস্টিয়ান মিশনারী সাঁওতাল পরিবারদের জন্য বেশ কয়েকটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়। কিন্তু পরিবার বড় হয়ে যাওয়ায় সেখানেও তাদের বসবাস করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
সাঁওতালদের প্রধান পেশা ছিলো বন-জঙ্গলে বিভিন্ন পশু-পাখি শিকার করা। এখন বন-জঙ্গল কমে যাওয়ায় তারা কৃষি কাজেই জীবিকা নির্বাহ করছে। নারী পুরুষ সবাই এখন কৃষি জমিতে কাজ করেন। তবে নারীরাই পরিশ্রমী বেশি। তারা গরু ছাগল ভেড়া পালন করেন। বর্তমানে মাঠে কাজ না থাকায় তারা বেকার হয়ে বসে আছেন।
ফলে কার্ত্তিকের মঙ্গা গ্রাস করে তাদের। সংসার চালাতে তারা জমির মালিকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিচ্ছেন। আর দুই সপ্তাহ পর ধান কাটা মাড়াই শুরু হলে কাজ করে টাকা শোধ দিবেন। আবার কেউ বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্য তৈরি করে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করেন।
জয়পুর গ্রামের নীলমনি সরেন নামের এক সাঁওতাল নারী বলেন, কর্তা আর আমি দুইজনে মিলে মাঠে কাজ করি। কিন্তু এখন কোনো কাজ নেই। অর্থকষ্টের কারণে খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটছে।
মাদারপাড়া গ্রামের তেরেজা টুডো বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ধান এখনও পাকেনি। তাই মাঠে কাজও নেই। বেকার থাকলেতো তিনজনের জীবন চলবে না। তাই জঙ্গল থেকে বিন্নার ফুল কেটে নিয়ে ঝাড়ু তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি।
আদিবাসী গবেষক প্রফেসর নজরুল ইসলাম জানান, আদিবাসীরা মূলত চারটি অঞ্চলে বসবাস করেন। প্রধান হচ্ছে পাহাড় আর সমতল। এছাড়া বন এবং উপকূলেও আছে। ইতিহাস বলছে সাঁওতালরাই এই অঞ্চলের আদিবাসী। অথচ এরা বঞ্চনার শিকার।
তিনি বলেন, সাঁওতালদের ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। জমি হারিয়ে যাচ্ছে। তাদের জীবনও বিপন্ন। এগুলো আগ্রাসনের ফসল। সাঁওতাল পল্লীতে কোন স্কুল নেই, হাসপাতাল নেই। তাদের কাছে খাবার কেনার টাকা নেই। এ অবস্থার উন্নতি হওয়া দরকার।