মুগাবের অবর্তমানে গুচির পরিণতি কি কারাভোগ!

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রবার্ট মুগাবে ও ফার্স্ট লেডি গুচি গ্রেস

রবার্ট মুগাবে ও ফার্স্ট লেডি গুচি গ্রেস

রবার্ট মুগাবের মৃত্যুতে জিম্বাবুয়ের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা মিশ্র অনুভূতি কাজ করতে পারে, কারণ তিনি একজন নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক হিসেবেও পরিচিত। যার শাসনামলে দুর্ভিক্ষ ও দরিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল জিম্বাবুয়ের  জনগণকে। আবার এটাও সত্য তিনি জিম্বাবুয়ের জাতির পিতা এবং প্রতিষ্ঠাতা যিনি সংখ্যালঘু রোডেশিয়ানদের শাসন থেকে জিম্বাবুয়েকে মুক্ত করেছিলেন।

গুচি গ্রেস রবার্ট মুগাবের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৯৬ সালে। ঠিক তার চার বছর পর বরার্ট মুগাবের প্রথম স্ত্রী স্যালির কিডনিজনিত রোগে মৃত্যু হয়। স্যালির দুইটি সন্তানের দায়িত্ব নেন গুচি। পরবর্তীতে তাদের আরও একটি সন্তান হয়। তবে রবার্ট মুগাবে ও গুচি গ্রেসের সম্পর্ক শুরুতে  লুকায়িত ছিল জিম্বাবুয়ের সাধারণ মানুষের কাছে।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৫ সালে রবার্ট মুগাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তার জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে তখন তার শাসন অন্যদিকে মোড় নেয়। ১৯৮৩ সালে উত্তর কোরিয়া সঙ্গে সংঘটিত এক দ্বন্দ্বে নিহত হয় প্রায় দশ হাজার নাগরিক। তারপর থেকেই মুগাবে নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিতি পান জিম্বাবুয়ের মানুষের কাছে।

বিজ্ঞাপন

মুগাবে ও তার স্ত্রী গুচি অনেকটা নিজেদের ইচ্ছেমতো দেশ পরিচালনা করছিলেন। যেখানে বারবার তার স্ত্রী গুচির বিলাসী জীবন-যাপন আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

২০০০ সালের শেষের দিকে জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হলেও গুচি গ্রেসের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় লাগাম টেনে ধরতে নারাজ ছিলেন রবার্ট মুগাবে। অবৈধ উপার্জন আর দুর্নীতি দায়ে দেশের গণ্ডি বাইরেও রবার্ট মুগাবের নাম ছড়াতে শুরু করে তখন।

২০১৪ সালে গুচি রাজনীতিতে তার নাম লেখান। এক্ষেত্রেও কোনো ধরনের দ্বিমত পোষণ করেননি মুগাবে। কোনো ধরণের একাডেমিক দক্ষতা ছাড়াই মুগাবের প্রভাবে জিম্বাবুয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী দেওয়া হয় তাকে।

তারপর গুচি ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ দলের মহিলা শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পান। আর এরই মধ্যে দিয়ে তিনি এ দলের সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পান। এভাবেই কোনো ধরনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন।

তারপরের ঘটনার জন্য হয়ত জিম্বাবুয়ের সাধারণ মানুষ একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট জয়সি মুজুরু ও সাতজন সরকারি মন্ত্রীকে পদচ্যুত করেন। গুচির পরিকল্পনা ছিল,  মুগাবের পরিবর্তে তিনি ছাড়া নেতৃত্ব দেবার মতো আর কোনো পথ যেন খোলা না থাকে।

কিন্তু গুচির সবচেয়ে বড় ভুল ছিল দলের প্রধান বিরোধী এমারসন মাঙ্গাওয়ার সঙ্গে বিরোধিতায় যাওয়া। এমারসন মাঙ্গাওয়া ছিলেন মুগাবের ডান হাত। একইসঙ্গে জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনীর সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল তার।

২০১৭ সাল। তখন জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনী বেশ সতর্ক। সেনাবাহিনীর ধারণা ছিল, যেকোনো সময় মাঙ্গাওয়ারকে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে। ঠিক এমন সময় মাঙ্গাওয়ারের উপর নিষেধাজ্ঞা আসে। মুগাবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হলে গুচির নির্দেশ নিয়ে তবে যেতে হবে বলে আদেশ আসে। এমন খবর শোনা মাত্রই জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনী গুচি ও মুগাবেকে কারাবন্দী করেন।

সেই বছর নভেম্বরে মুগাবেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় আর এরই মধ্য দিয়ে গুচির রাজনীতির ইতিহাসের অসমাপ্ত অধ্যায়ের শেষ হয়।

তবে গুচি  থেমে ছিল না। একের পর এক সমালোচনার জন্ম দিয়ে গিয়েছেন। ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার এক মডেলের বিরুদ্ধে গুচির যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। তবে এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে গুচি বলেন, 'আমি একটি মদ্যপ মহিলা থেকে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম।'

এখানেই শেষ নয় ফার্স্ট লেডি থাকাকালীন অবৈধ সম্পদের উৎস ও তার হিসেব চেয়ে গুচিকে নোটিশ দেওয়া হয় দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে। যদিও সে যাত্রায় গুচি বেঁচে গেলেও, এখন প্রশ্ন থেকে যায় মুগাবের অবর্তমানে গুচিকে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ভোগের মামলায় কারাভোগ করতে হবে কিনা?