ইবাদত: প্রকাশ্যে না গোপনে?
ইবাদত-বন্দেগি প্রকাশ্যে পালনের পাশাপাশি নীরবে বা গোপনে পালনের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রে প্রধানতম বিষয় হলো- আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে ইবাদত করা।
দ্বিতীয় বিষয় হলো- ইবাদতটি সুন্নত অনুযায়ী করা। তৃতীয় হলো- ইবাদতটি রিয়ামুক্ত তথা মানুষকে দেখানোর মানসিকতায় না করা। সব ধরনের ইবাদতের ক্ষেত্রে এগুলো প্রযোজ্য। ইবাদত প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য- এটা মুখ্য নয়।
কিছু ইবাদত রয়েছে যেগুলো প্রকাশ্যে করতে হয়। যেমন- নামাজ। নামাজ মসজিদে এসে জামাতের সঙ্গে প্রকাশ্যেই আদায় করতে হয়। হজ বাতুল্লাহ যেয়ে প্রকাশ্যেই পালন করতে হয়।
ঈদের নামাজ প্রকাশ্যেই আদায় করতে হয়। কোরবানি প্রকাশ্যেই আদায় করতে হয়। এছাড়া কিছু ইবাদত রয়েছে যা গোপনে পালন করা যায়। যেমন জিকির, কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ ও দান-সদকা ইত্যাদি।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- যে ইবাদত অপ্রকাশ্যে করা যায়, তা অপ্রকাশ্যে করাই উত্তম। আর যা লুকিয়ে করা যায় না, তা প্রকাশ্যেই করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।’ -সূরা হুজুরাত: ২১
কোরআনে কারিমের অন্যত্র আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং এমন স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম; সকালে ও সন্ধ্যায়। আর বে-খবর থেকো না।’ -সূরা আরাফ: ২০৫
এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস বিন মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন কিয়ামত সন্নিকটে হবে, তখন আমার উম্মত তিন ভাগে বিভক্ত হবে। একদল একনিষ্ঠভাবে আল্লাহতায়ালার ইবাদত করবে। আরেক দল, মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করবে। আরেকদল মানুষের কাছ থেকে হাদিয়া-তোহফা পাওয়ার জন্য ইবাদত করবে। যখন তারা কিয়ামতের দিন একত্র হবে। মানুষ থেকে খাবার পাওয়ার আশায় যে ইবাদত করতো, তাকে আল্লাহতায়ালা বলবেন, আমার ইজ্জত ও সম্মানের কসম! তুমি আমার ইবাদত কী উদ্দেশ্যে করতে? সে বলবে, আপনার ইজ্জত ও সম্মানের কসম! মানুষের হাদিয়া-তোহফা পাওয়ার আশায়। আল্লাহতায়ালা বলবেন, তুমি যা কিছু জমা করেছো এর কোনো কিছুই তোমার উপকারে আসবে না। তুমি জাহান্নামের দিকে চলে যাও। তারপর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর ইবাদত করতো, তাকে আল্লাহতায়ালা বলবেন, আমার ইজ্জত ও সম্মানের কসম! তুমি কেন আমার ইবাদত করতে? সে বলবে, আপনার সম্মান ও ইজ্জতের কসম! আমি লোক দেখানোর জন্য ইবাদত করতাম। আল্লাহ বলবেন, তোমার কোনো ইবাদত আমার পর্যন্ত পৌঁছেনি, সুতরাং তুমিও জাহান্নামে চলে যাও।
এরপর যে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহতায়ালার জন্য ইবাদত করেছে তাকে আল্লাহ বলবেন, আমার ইজ্জত ও সম্মানের কসম! আমার ইবাদত করার দ্বারা তোমার কী উদ্দেশ্য ছিল? সে বলবে, আপনার ইজ্জত ও সম্মানের কসম! এ বিষয়ে আপনিই আমার থেকে বেশি অবগত। আমি ইবাদত করেছি কেবল আপনার সন্তুষ্টির নিমিত্তে। আল্লাহতায়ালা বলবেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। তুমি জান্নাতে চলে যাও।’ -আলমুজামুল আওসাত: ৫১০৫