যে কোনো বিনোদন প্রোগ্রামের সঙ্গে আজকাল পাল্লা দিয়ে চলছে টেলিভিশন টক শো। ফলে বর্তমান সময়ে টক শো ভীষণ জনপ্রিয় ৷আর সেই টক শো-র হোস্ট যদি হন কোনো সেলিব্রিটি তাহলে তো কথাই নেই ৷
এবার এমন একটি টক শো নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিশিষ্ট ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল। তবে তা টেলিভিশনের পর্দায় নয়, এই শো দেখা যাবে ইউটিউবে।
বিজ্ঞাপন
ভিন্নধর্মী এই ওয়েব টক শোর নাম "মাই কেবিন"। এই শো মূলত বিশিষ্টজনদের নিয়ে, সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এর মধ্যে থাকবে রাজনীতিবিদ, অভিনেতা, সাহিত্যক বিভিন্ন সেলিব্রিটিরাও।
এপার-ওপার দুই বাংলার বিশিষ্ট মানুষদের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে। অনুষ্ঠানের মূল প্রেক্ষাপট একটু আলাদা রকম; অজানা কথা দর্শকদের জন্য তুলে আনা এই শো অক্টোবরেই তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ইউটিউবে দেখতে পাবেন। মাই কেবিন– টক শো এর স্ক্রিপ্ট লিখছেন লেখিকা তানিয়া চক্রবর্তী। পরিচালনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন প্রতাপ ঘোষ।
বিজ্ঞাপন
পরিচালকের কথায়, আর পাঁচটা শোয়ে যে ধরনের প্রশ্ন করা হয় তার বাইরে গিয়ে প্রশ্ন করা হবে ৷ আলোচনা চলবে অনেকটা ঘরোয়া আড্ডার মতো ৷ এই ওয়েব টক শোয়ে হাজির থাকবেন সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রের প্রথম সারির ব্যক্তিত্বরা৷ তবে তাঁদের সাফল্য নয়, বরং সাফল্যের নেপথ্য কাহিনী ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বেশি করে তুলে ধরা হবে আড্ডার মোড়কে ৷
ওয়েব টক শোর কারণ সম্পর্কে পরিচালক প্রতাপ ঘোষ জানালেন , "আজকাল সবকিছুই ডিজিটালাইজড হয়ে যাচ্ছে ৷ তাই ওয়েবে এই শো করার ভাবনা মাথায় আসে৷ সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সাফল্যের কাহিনী শুনলে এখনকার ছেলেমেয়েরা অনুপ্রাণিত হতে পারে ৷ আরও বেশি মানুষের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়াই এই শো-য়ের উদ্দেশ্য৷
ব্যতিক্রমী এই শোয়ে নিজের নতুন ভুমিকা নিয়ে অগ্নিমিত্রা পল বলেন, "এটা একটু অন্য ধরনের কাজ ৷ বরাবরই একটু অন্য ধরনের কাজ করতে আমি আগ্রহী ৷ নিজের প্রফেশন ছাড়াও বিভিন্ন দিকে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করি ৷ সেরকমই এই চ্যাট শো ৷
আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে ‘মাই কেবিনের শুটিং’ ৷ সব ঠিকঠাক থাকলে তার পরের সপ্তাহ থেকেই ইউটিউবে এই শো দেখা যাবে। ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে শোয়ের পোস্টার ও টিজার ৷
২০২৪ সালে গানের অঙ্গনে রচিত হয়েছে নতুন দৃশ্যপট। সিনেমা, নাটক, সিরিজের পাশাপাশি একক, দ্বৈত ও সন্মিলিত গানের প্রকাশনা থেকে শুরু করে স্টেজ শো, অনলাইন ও টিভি আয়োজনে ছিল তারুণ্যের জয়গান। এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক গানের ভুবনের চিত্র।
গত দুই বছরের মতো চলতি বছরের প্রথমভাগে আলোচনায় ছিল সিনেমা ও বিভিন্ন শিল্পীর ফিউশনধর্মী গান। সুপারস্টার শাকিব খানের ক্রেজ একদিকে যেমন দর্শককে হলমুখী করেছে, তেমনি তার সিনেমার গানগুলো পূরণ করেছেন দর্শক চাহিদা। ‘রাজকুমার’ সিনেমার টাইটেল গান গেয়ে আরও একবার দর্শক-শ্রোতা হৃদয়ে কড়া নেড়েছেন বালাম-কোনাল জুটি। আসিফ ইকবাল লেখা ও আকাশের সুর করা ‘রাজকুমার’ গানটি দারুণ সাড়া ফেলেছিল। একইভাবে শ্রোতার প্রশংসা কুড়িয়েছে এই সিনেমায় প্রিন্স মাহমুদের সুরে তরুণ শিল্পী আলিফের গাওয়া ‘বরবাদ’ গানটি।
তবে বছরের সবচেয়ে আলোচিত ও সাড়া জাগানো গান ছিল শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’ সিনেমায় জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী দিলশাদ নাহার কনার গাওয়া ‘দুষ্টু কোকিল’। গানটির কথা-সুর ও সংগীতায়োজনের পাশাপাশি সহশিল্পী হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন আকাশ। একই ছবির গান ‘লাগে উড়া ধুরা’ পাল্লা দিয়েছে অন্যান্য সিনেমার গানের রেকর্ড ভেঙে দিতে। প্রীতম হাসান ও দেবশ্রী অন্তরার গাওয়া এই গানের কথা লিখেছেন রাসেল মাহমুদ ও শরীফউদ্দিন; সুর-সংগীতায়োজন করেছেন প্রীতম হাসান ও রাজ্জাক দেওয়ান। শ্রোতা মনোযোগ বেড়েছে এই সিনেমায় আরাফাত মহসিনের সুরে হাবিব ওয়াহিদের গাওয়া ‘ফেঁসে যাই’ গানটিও।
‘লাস্ট ফিফেন্ডারস অব মনোগামী’-এর জন্য প্রচলিত গান ‘কমলায় নৃত্য করে’ নতুন করে গেয়ে মনোযোগ কেড়েছেন জেফার রহমান। গানটি নতুন করে সংগীতায়োজন করেছেন চিরকুট ব্যান্ডের পাভেল আরীন। কবির বকুলের কথা ও শওকত আলী ইমনের সুরে ‘লিপস্টিক’ সিনেমায় স্নেহার গাওয়া ‘বেসামাল’ ছিল অনেকের মুখে মুখে। গত কয়েক বছর ধরে নাটকের জন্য আলাদা করে গান রেডর্ক করা হচ্ছে। যার মধ্য থেকে অসংখ্য গান জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।
এ বছর তার ব্যতিক্রম ছিল না। ইমরান-কনা শিল্পী জুটির ‘প্রেম এসেছিলো একবার’ নাটকের ‘মেঘলা মনে’, ‘এক নজর না দেখলে তার’-এর ‘পরাণ’, ‘তাহার নামটি মায়া’র ‘জীবন সাথী’, ‘নূরজাহানর’-এর ‘মায়া’, কোনাল-আভরাল সাহির জুটির ‘মনের আকাশে তুমি’ নাটকের ‘শুধু তোরই থাকবো’, গানের দল কাকতালের ‘সন্ধ্যা ৭টা’র ‘মায়া’, মাহতিম শাকিবের টাইটেল গান ‘একটাই তুমি’, ইমরান-পড়শীর ‘এতটা আপন’সহ আরও বেশ কিছু গান দর্শক-শ্রোতার পছন্দের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
সিনেমা, নাটকের গানের বাইরে শ্রোতাদের মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার গানের অন্যতম একটি আয়োজন ছিল ‘কোক স্টুডিও বাংলা’-এর ফিউশনধর্মী আয়োজন ‘মা লো মা’। সাগর দেওয়ান, প্রীতম হাসান, আরিফ দেওয়ান, আলি হাসানের গাওয়া এই গানে আমাদের সংগীতের শিকড় ও লোক সংস্কৃতির ইতিহাসকে নতুনভাবে তুলে আনা হয়েছে। একইভাবে ‘তাঁতী’ গানেও ছিল ঐহিত্য তুলে আনার প্রয়াস। এ আয়োজনে সঙ্গে ছিলেন শিল্পী ও সংগীতায়োজক অর্ণব, গঞ্জের আলী, অলি বয় ও অভিনেত্রী জয়া আহসান। পুরোনো গানকে কতটা অভিনব ও সময়োপযোগী করে তোলা যায় তার আরেকটি প্রচেষ্টা ছিল ওয়ারফেজ ব্যান্ডের রিমেক আয়োজন ‘অবাক ভালোবাসা’। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত এই গানের আবেদন ৩০ বছর পরেও এতটুকু কমেনি তার প্রমাণ করেছে ব্যান্ড ওয়ারফেজ ও কোক স্টুডিও বাংলা অনুষ্ঠান আয়োজকরা।
বছরের শেষ দিকে মিউজিক ভিডিও দিয়ে চমক দেখিয়েছেন জনপ্রিয় গানের জুটি ইমরান ও পড়শী। গত ১০ ডিসেম্বর পড়শীর ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত হয় ‘কথা একটাই’ গানটি। রবিউল ইসলাম জীবনের কথা, ইমরান মাহমুদুলের সুরে গানটির ভিডিওচিত্রেও দেখা গেছে ইমরান-পড়শীকে। ভিডিওটি মাত্র ১৫ দিনে ৫০ লাখ ভিউ অতিক্রম করেছে।
গানের বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একক ও দ্বৈত গানের আয়োজন নিয়ে সারাবছর শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ করে গেছেন ফাহমিদা নবী, আসিফ আকবর, বাপ্পা মজুমদার, হাবিব ওয়াহিদ, ইমরান, তাহসান, হৃদয় খান, সালমা, লিজা, কর্ণিয়া, বেলাল খান, পড়শী, মাহতিম শাকিব, অবন্তি সিঁথি, আতিয়া আনিসা, তোসিবা, জেফার, জয় শাহরিয়ার, এলিটা করিম, লিমন, জয়িতা, তাসনিম আনিকা, মুজা, সঞ্জয়, আলি হাসান, জিসান খান শুভ, শেখ সাদী, অন্তরা কথা, ব্যান্ড সোলস, ওয়ারফেজ, ব্ল্যাক, আর্টসেল, শিরোনামহীন, ইএফ, চিরকুটসহ আরও বেশ কিছু শিল্পী ও ব্যান্ড। তাদের গাওয়া শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকাও বেশ বড়।
২০২৪ সালে সাড়া জাগানো শিল্পী ও গানের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে যে বিষয়টি আলাদা ভাবে উঠে আসে, তাহলো তরুণদের অভিনব ও প্রতিবাদী গানের আয়োজন। বছরের দ্বিতীয়ার্ধের যার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছিল শ্রোতা মনে। শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সূত্র ধরে এক দফা দাবী এবং গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসকের পতনে বাংলাদেশের এক নতুন রূপরেখা তৈরি হয়েছে। আর সেই সময়ে থেকেই খানিকটা বদলে গেছে গানের ভুবনের চেনা অবয়ব। যেখানে চলছে তরুণদের জয়জয়কার।
সে সময় হান্নান নামের এক তরুণ র্যাপার পারকে আমরা দেখেছি প্রতিবাদী শিল্পীদের সামনের সারিতে। তার গাওয়া ‘আওয়াজ উডা’ গানটিকে সবাই উল্লেখ করছেন সময়ের সাহসী উচ্চারণ হিসাবে। একই ভাবে রাজপথে আওয়াজ তুলে যাচ্ছেন কণ্ঠশিল্পী সায়ান। তরুণ অভিনেত্রী ও কণ্ঠশিল্পী পারসা মাহজাবীনের গাওয়া ‘চলো ভুলে যাই’ গানটিও হৃদয় আন্দোলিত করেছে কয়েক লক্ষ শ্রোতার। চব্বিশের গেরিলা নামের একটি গানের দল স্বনামে প্রকাশিত গানটি হয়ে উঠেছিল ছাত্র আন্দোলেনর অন্যতম হাতিয়ার।
র্যাপ শিল্পী সেজানের গাওয়া ‘কথা ক’ গানটিও আন্দোলনকারীদের মুখে মুখে ফিরছে। এ ছাড়াও ওয়ারফেইজ ব্যান্ডের সাবেক তারকা গিটারিষ্ট অনি হাসানের কম্পোজিশনে কাজী জোহাদ ইয়াদানীর গাওয়া ‘আমরা বীর’, কোল্ডক্রাফটের ‘বায়ান্ন’, অ্যাজ অমিঙে ‘রক্ত’, ম্যাক-ই-ম্যাক ও জিকে কিবরিয়ার ‘স্লোগান’ ও ‘ইনকিলাব’, সিয়াম ফারদিনের ‘আবু সাঈদ’, নাহিদ হাসানের ‘জবাব দেনা’, রেভ্যুলেশন ইন মোশনের ‘পাল্টে দে ইতিহাস’, ভয়েস অব রেভ্যুলেশনের ‘রাজাকার’, লুনাটিঙ্ বীর ও রিদমাস্ত্রের ‘দেশ কার’সহ আরও বেশ কিছু গান স্বপ্ন রচনা করেছে নতুন বাংলাদেশের। সবমিলিয়ে ২০২৪ সালে সংগীতাঙ্গনের পুরো সময়টায় ছিল প্রেম, প্রতিবাদ আর ঐতিহ্যের মুর্চ্ছনা।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা কারণে এ বছর ঢালিউডে মুক্তি পেয়েছে ৫০টি সিনেমা! এরমধ্যে চার-পাঁচটি ছবি ব্যবসাসফল হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় হিটের গ্রাফ নিন্মমুখীই বলা যায়! সব মিলিয়ে ২০২৪ সালটা বাংলা চলচ্চিত্রের জন্যই সার্বিকভাবে খুব ভালো যায়নি।
তবে সবার ছবি হিট না হলেও অভিনয়ের দিক দিয়ে সফল বলা যায় কয়েকজন তারকাকে। এ আয়োজনে দেখে নেওয়া যাক সেই অভিনেতা কারা-
শাকিব খান
কয়েক বছর ধরে নতুন নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করছেন শাকিব খান। তারা ঢাকাই ছবির এই শীর্ষ নায়ককে নতুনভাবে পর্দায় হাজির করেছেন। এবারও তা-ই হয়েছে। বছর শুরুতে শাকিব খানকে নিয়ে হিমেল আশরাফ বানিয়েছেন ‘রাজকুমার’। এরপর ‘তুফান’ ও ‘দরদ’ সিনেমায় তাকে ভিন্নভাবে দেখেছেন দর্শক। তিনটি ছবিতে কখনো তিনি গ্রামের সাধারণ যুবক, কখনো কুখ্যাত গ্যাংস্টার- সব চরিত্রে তিনি নিজের অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন শাকিব খান।
সিনেমায় এ বছর সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক সাফল্য শাকিব খানের তুফান। ঈদুল আজহায় ‘তুফান’ ছবিটি মুক্তির পর রীতিমতো হইচই পড়ে। রায়হান রাফী পরিচালিত এবং এসভিএফ ও আলফা আই লিমিটেড প্রযোজিত ‘তুফান’ ছবিটি শুটিং শুরুর পর থেকেই আলোচনায় ছিল। সিনেমা মুক্তির পর এই আলোচনা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মতে, তুফান ছবির মাধ্যমেই ঢালিউড বছরের প্রথম বড় কোনো ব্যবসায়িক সফলতা পায়। বছর শেষ পর্যন্ত শাকিব খানের এই ছবিকে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেনি।
বছরের শেষ দিকে ‘দরদ’ নিয়ে আলোচনা হলেও মুক্তির পর ছবিটি সেভাবে সাড়া জাগাতে পারেনি। যদি মুক্তির প্রথম দুই দিন ব্যবসায়িকভাবে ভালোই সফলতা দেখিয়েছে। ছবিটি নিয়ে পরিচালক অনন্য মামুনের অতিকথন দর্শকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে বছর শেষে হিসেবে এটা দাঁড়ায়, গেল বছরের তুলনায় শাকিব খান এ বছরে নিজেকে আরও ছাড়িয়ে গেছেন।
শরীফুল রাজ
শরীফুল রাজ সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন রায়হান রাফির ‘পরাণ’ ছবিটি দিয়ে। ‘পরাণ’ মুক্তির পর একাধিক পরিচালকের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবও পান। কিন্তু সাবধানী হয়ে পথ চলেছেন রাজ। বেছে বেছে ছবির কাজ হাতে নিয়েছেন। এ বছরে ঢালিউডের এই তারকার তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘কাজলরেখা’, মিশুক মনি’র ‘দেয়ালের দেশ’ ও মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘ওমর’। তিনটি ছবিতে তিন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে নিজের অভিনয় দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। এ বছরে মুক্তি পাওয়া তিনটি ছবি রাজকে আলোচনায় রেখেছে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মতে, শরীফুল রাজ যদি তার কাজের ব্যাপারে আন্তরিক থাকে, তাকে নিয়ে ভবিষ্যতে বাজি ধরা যাবে।
আদর আজাদ
রিয়ালিটি শো ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরু করেন আদর আজাদ। নাটক শেষে একটা সময় চলচ্চিত্রে অভিনয়ে মনোযোগী হন। প্রতিনিয়ত প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। অভিনয়ে নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা করছেন। এ বছর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে আদর আজাদ অভিনীত ‘লিপস্টিক'। এ ছবিতেও আদর আজাদ দেখিয়েছেন মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমার সফল নায়ক হওয়ার মতো গুণ তার মধ্যে ভালোই আছে। কামরুজ্জামান রোমান পরিচালিত এই ছবিতে আদরের বিপরীতে অভিনয় করেছেন পূজা চেরী। এদিকে বছর শেষে ‘পিনিক’ নামে নতুন একটি ছবিতে শুটিংয়ের খবরও দেন। এই ছবিতে আদরের বিপরীতে অভিনয় করেছেন শবনম বুবলী। এরই মধ্যে ছবিটির ফার্স্ট লুক পোস্টার প্রকাশিত হয়েছে।
গেল ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর শেরাটন হোটেলের বলরুমে অনুষ্ঠিত হয় কালচারাল জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি)-এর ২৩তম আসর। ২০২৩ সালে প্রকাশিত নাটক, সিনেমা ও গান থেকে বাছাই করে সেরাদের হাতে এই পদক তুলে দেওয়া হয়েছে। আর এই আসরে সমালোচকের রায়ে বছরের সেরা গীতিকবির পুরস্কার পেয়েছেন মাহমুদ মানজুর।
২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের নির্মাণে মেহজাবীন চৌধুরী অভিনীত আলোচিত নাটক ‘অনন্যা’র ‘আপনজন’ গানের জন্য এই স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর সিনেমাওয়ালার ব্যানারে প্রকাশিত গানটির ইউটিউব ভিউ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি।
কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম এবং নন্দিত গীতিকবি ও নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলীর হাত থেকে পদকটি গ্রহণ করেন মাহমুদ মানজুর। এসময় তাকে সম্মাননা ক্রেস্ট ছাড়াও একটি মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
মাহমুদ মানজুর মূলত সাংবাদিক হলেও ২০০২ সাল থেকে গান লেখার সঙ্গে জড়িয়েছেন নিজেকে। এরমধ্যে সিনেমা, নাটক ও স্বাধীন মাধ্যমে শতাধিক গান রচনা করেছেন তিনি। রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল বিটিভি’র তালিকাভুক্ত গীতিকবি তিনি। তার গান কণ্ঠে তুলেছেন কিংবদন্তি রুনা লায়লা, কুমার বিশ্বজিৎ, কলকাতার শিলাজিৎসহ এই প্রজন্মের কণা, আরফিন রুমি, পড়শী, পিন্টু ঘোষ, জয় শাহরিয়ার, ইমরান, কিশোর, ন্যানসি, বেলাল খান, সন্ধি, কোনাল, রেহান রাসুলসহ অনেকে।
পুরস্কার পেয়ে মাহমুদ মানজুর বলেন, ‘আমার গান লেখার ক্যারিয়ার ২০ বছরের। এরমধ্যে শতাধিক গান লিখেছি। অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। তবে যে কোনও পদক সৃষ্টিশীল ক্ষেত্রে বেশ অনুপ্রেরণা যোগায়। এই পদক প্রাপ্তি আমার আগামীর সৃষ্টিশীল সংগীত জীবনের অন্যতম প্রেরণা হয়ে থাকবে। আমি সম্মানিত জুরি বোর্ড সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা আমাকে এই পদকের জন্য যোগ্য মনে করেছেন।’
মাহমুদ মানজুর তার এই প্রাপ্তির জন্য নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, সুরকার নাভেদ পারভেজ, অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীসহ ‘অনন্যা’ নাটক সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নাটক, সিনেমা ও সিঙ্গেল গানের বাইরে মাহমুদ মানজুরের লেখা দুটি পূর্ণাঙ্গ মিশ্র শিল্পীর অ্যালবাম রয়েছে। নাম ‘ধুলোর গান’ ও ‘পৃথিবীর ক্যানভাস’। এই গীতিকবি পেশায় একজন সাংবাদিক। গত দশ বছর তিনি কর্মরত আছেন দেশের অন্যতম অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন-এর আর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট এডিটর হিসেবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা কারণে এ বছর ঢালিউডে মুক্তি পেয়েছে ৫০টি সিনেমা! এরমধ্যে চার-পাঁচটি ছবি ব্যবসাসফল হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় হিটের গ্রাফ নিন্মমুখীই বলা যায়! সব মিলিয়ে ২০২৪ সালটা বাংলা চলচ্চিত্রের জন্যই সার্বিকভাবে খুব ভালো যায়নি।
তবে সবার ছবি হিট না হলেও অভিনয়ের দিক দিয়ে সফল বলা যায় কয়েকজন তারকাকে। এ আয়োজনে দেখে নেওয়া যাক সেই অভিনেত্রীদের তালিকা-
জয়া আহসান
ঢালিউডের জনপ্রিয় অন্য নায়িকারা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত, জয়া আহসান তখন তার ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয় ক্যারিশমা দেখিয়ে এ বছরও ছাড়িয়ে গেছেন অন্য সবাইকে। বছরের শুরুতে জয়া আহসান অভিনীত ‘পেয়ারার সুবাস’ মুক্তি পেয়েছিল। মস্কোজয়ী নূরুল আলম আতিক পরিচালিত ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। ব্যবসায়িকভাবে ছবিটি ফায়দা তুলতে না পারলেও জয়া আহসান তার অভিনয় দিয়ে প্রশংসা পান। শুধু তাই নয়, বছর শেষেও মুক্তি পেয়েছে জয়া অভিনীত আকরাম খান পরিচালিত ‘নকশী কাঁথার জমিন’। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ছবিটিও সমালোচকদের প্রশংসা পাচ্ছে!
শবনম বুবলী
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা আলোচনা-সামলোচনা থাকলেও এ বছর অভিনয় নিয়ে সফলতা পেয়েছেন নায়িকা শবনম বুবলী। প্রতি বছরের মতো এ বছরেও তার অভিনীত একাধিক ছবি মুক্তি পেয়েছে। তবে ‘দেয়ালের দেশ’ ছবির জন্য হয়েছেন তুমুল প্রশংসিত। অনেকে বলছেন, ‘দেয়ালের দেশ’ বুবলীর ক্যারিয়ারের অন্যতম পারফরমেন্স।
কুসুম সিকদার
সবশেষ ২০১৬ সালে বড়পর্দায় দেখা যায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী কুসুম সিকদারকে। বাংলার খ্যাতিমান নির্মাতা গৌতম ঘোষ নির্মিত ‘শঙ্খচিল’ সিনেমায় প্রসেনজিতের বিপরীতে দুর্দান্ত অভিনয় করে পেয়েছিলেন বাহবা! প্রায় ৮ বছরের দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে এই অক্টোবরে ‘শরতের জবা’র মাধ্যমে বড়পর্দায় ফেরেন কুসুম। যথারীতি পেয়েছেন প্রশংসা। ‘শরতের জবা’ সিনেমাতে মূল চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি এর চিত্রনাট্য, প্রযোজনা ও পরিচালনার দায়িত্বও একাই সামলেছেন কুসুম!
মাসুমা রহমান নাবিলা
অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’ দিয়ে চঞ্চল চৌধুরীর সাথে মাৎ করেছিলেন মাসুমা রহমান নাবিলা। সেই ছবির পর বড়পর্দায় তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। অবশেষে শাকিব খানের বিপরীতে বছরের শীর্ষ ব্যবসাসফল ছবি ‘তুফান’ এর মাধ্যমে প্রেক্ষাগৃহে ফেরেন। রায়হান রাফীর পরিচালনায় এই ছবিটিতে শাকিবের বিপরীতে দেখা গেছে দুই অভিনেত্রীকে, একজন কলকাতার মিমি চক্রবর্তী, অন্যজন নাবিলা। গ্ল্যামারগার্ল হিসেবে মিমি চক্রবর্তীর উপস্থিতির পাশাপাশি নাবিলার সাবলীল অভিনয় দর্শকের মন ছুঁয়ে গেছে। কমার্শিয়াল ছবির মোড়কে আলাদাভাবে প্রশংসিত হয়েছেন নাবিলা।
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা
‘মনপুরা’খ্যাত পরিচালক গীয়াসউদ্দিন সেলিমের স্বপ্নের প্রজেক্ট ছিলো ‘কাজলরেখা’। ছবিটি মুক্তির পর দর্শকের ভালোই সাড়া পাওয়া গেছে। শিল্পীরা অভিনয় গুণে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। কঙ্কন দাসী চরিত্রে তার নিখুত অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন সুবণা মুস্তাফার মতো প্রখ্যাত অভিনেত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক। মিথিলাকে প্রথমবারের মতো সিনেমার পর্দায় নেতিবাচক চরিত্রে দেখা গেছে। মিষ্টি মেয়ের ইমেজ ভেঙে তিনি তার চরিত্রের মধ্যকার লোভ, হিংসা ও কুটিলতাগুলোকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
মেহজাবীন চৌধুরী
বড়পর্দায় পা রেখেই চমকে দিয়েছেন লাক্স সুপারস্টার মেহজাবীন চৌধুরী। প্রায় ১৪ বছর ধরে ছোটপর্দা মাতিয়ে রাখছেন মেহজাবীন। দর্শকের প্রশ্ন ছিলো, কবে তিনি বড়পর্দায় পা রাখছেন! ২০২৪ এর শেষ প্রান্তে এসে তার মোক্ষম জবাব দিলেন তিনি। ‘প্রিয় মালতী’র হাত ধরে বড়পর্দায় অভিষিক্ত হলেন মেহজাবীন। পেলেন দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা। শঙ্খ দাশগুপ্তের এই সিনেমায় মেহজাবীনের অভিনয়ে মুগ্ধ হননি এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া দুস্কর!
এছাড়াও এই বছরে অভিষিক্ত হয়েছেন তাসনিয়া ফারিণ। ধ্রুব হাসানের ‘ফাতিমা’ দিয়ে ছিলেন আলোচনায়। সোহেল রানার বয়াতির নয়া মানুষ-এর জন্য মৌসুমী হামিদ, লিপস্টিক-এর জন্য পূজা চেরী, শ্যামা কাব্যের জন্য নীলাঞ্জনা নীলা, কাজলরেখার জন্য সাদিয়া আয়মান, ৩৬ ২৪ ৩৬-এর জন্য প্রার্থণা ফারদিন দীঘি ও কারিনা কায়সার এবং মেঘনাকণ্যা’র জন্য কাজী নওশাবা আহমেদ প্রশংসা কুড়িয়েছেন।