নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশায় যা বলছেন তারা
রাজধানী ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের প্রতিযোগিতায় দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর প্রতিবাদে ৯ দফা দাবিতে সারাদেশে চলছে ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনের চতুর্থ দিনেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে এসেছেন বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কথা বলছেন অনেকেই।
আইয়ুব বাচ্চু, কুমার বিশ্বজিৎ এবং মেহরিন মাহমুদ; এই তিন তারকা সংগীতশিল্পীও সচেতন এই বিষয়ে।
নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশায় পরিবহন সেক্টরের সামগ্রিক অবস্থা এবং চলমান ছাত্র আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে বার্তা২৪-কে নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা জানিয়েছেন তারা।
আইয়ুব বাচ্চু
আমি নিজেও তো মাঝেমধ্যে রাস্তায় থাকি, এরকমও বলতে শুনছি বাসওয়ালাকে, হেল্পারকে যে ‘বায়ে প্লাস্টিক’। আমার ছোট্ট গাড়িটিও কিন্তু নিজের কষ্টে কেনা গাড়ি। এখন যদি আমি প্লাস্টিক হয়ে যাই তাদের কাছে, এটা চিন্তার ব্যাপার। আমরা কি প্লাস্টিক নাকি? মানুষ না?
এই দুঃসাহসিকতা এই উদ্ধতা বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে, মানুষের গায়ে এখন গাড়ি তুলে দেওয়াও কোনো ব্যাপার না। যেহেতু ওদের কোনো শাস্তির বিধান নেই। আমার বিশ্বাস, এখন নিশ্চয়ই উপরের থেকে সুন্দর একটা নিয়ম করা হবে, একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং নিশ্চয়ই এগুলো কমে আসবে।
বিজ্ঞাপন
কুমার বিশ্বজিৎ
দায়িত্ববান লোকজন যদি তাদের দায়িত্ব পালন না করে, সেই খেসারত যদি পুরো দেশবাসি এবং সরকারকে দিতে হয়; এটা তো খুবই দুঃখজনক। লাইসেন্সবিহীন গাড়ি, নাবালক চালক, লাইসেন্সবিহীন চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি; রোডের মধ্যে দৃশ্যমান, এটা তো নতুন কিছু না! একটা বাসের কোনো রং নাই, হেডলাইট নাই; এটা তো হতে পারে না! এটা কেন হবে? এই আন্দোলনটা তো অসম্ভব যৌক্তিক একটা আন্দোলন। আন্দোলনেও যাবে কেন? এটা তো মৌলিক চাহিদা সবার! একজন নাগরিক হিসেবে আমি সুস্থভাবে চলাফেরা করবো, জীবন যাপন করবো, আমার ভবিষ্যত প্রজন্ম নিরাপদে চলবে; সেটার জন্য আমাকে তো কারো কাছে চিৎকার করার দরকার নাই! নৌপরিবহনমন্ত্রী, ওনার তো উচিৎ ছিলো এ্যটলিস্ট প্রত্যেকটা মা-বাবার কাছে ক্ষমা চাওয়া। উনি যেভাবে তাচ্ছিল্যভাবে নিজেকে শো করেছে, এদেশের একজন মন্ত্রী হিসেবে এটা খুবই দুঃখজনক এবং এজন্য সরকারকে লজ্জায় পড়তে হয়েছে।
মেহরিন মাহমুদ
যখনই আমি ঢাকার রাস্তায় নামি, তখন পাশ দিয়ে ভাঙা ভাঙা বাসগুলো যেভাবে যায়; আমার মনে হয় যে ওনারা নরমাল না, নরমাল হলে এভাবে কেউ গাড়ি চালাতে পারে না। আমাদের হাইওয়েগুলোর দুইপাশের চিত্র এতো মনোমুগ্ধকর, অথচ চলতে ভয় লাগে শুধু এই কমিউনিটিটার জন্য। এবং আমার ধারণা যে এনারা সাধারণ মানুষ নন। এনারা কোনো না কোনো ভাবে প্রভাবিত। কোনো একটা নেগেটিভ ইনফ্লুয়েন্সে এনারা চলেন, এটা এক। দুই হলো, আমি শুনেছি যে যতো তাড়াতাড়ি যাত্রী পার করতে পারেন, ততো ওনাদের লাভ। এই ব্যাপারটাও হয়তো ওনাদের মাথায় কাজ করে। কিন্তু ওনারা ভুলে যান যে, ওনাদেরই ভাই হয়তো ওনার গাড়ির সামনে পড়তে পারে; এমনকী নিজের সন্তানও। এটা আমার প্রতিদিনকার একটা বিস্ময় যে, এরা কারা!
আমি চাই যে- ভাল বাস আসুক, পরিচ্ছন্ন বাস আসুক, লক্ষী বাস আসুক, লক্ষী চালক আসুক। যেহেতু আমরাও সবদিক দিয়েই উচ্চমার্গের দিকে এগুচ্ছি, বাসের চেহারা এবং বাসের কর্মকর্তাবৃন্দ-চালকবৃন্দের মধ্যেও পরিবর্তন আসুক। ওনাদের শুভাশিষ আমাদের ভীষণ প্রয়োজন। আমরা কড়জারে ওনাদের কাছে বলছি- আপনারা আমাদের ভাইটি ছিলেন, ভাইটি থাকুন এবং ভাইটি আবারও হয়ে যান যদি কোনো কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে থাকেন। কারণ যেভাবে ওনারা গাড়ি চালান, আমাদের মনে হয় না ওনারা আমাদের ভাইটি আছেন।
ওনাদের সামনে একটা ছোট্ট গাড়ি পড়লে, ছোট্ট একটা সিএনজি পড়লে, ছোট্ট একটা মানুষও পড়লে সেটাকে ভ্রুক্ষেপ করেননা। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশেপাশে থাকি। ওইখানে পর্যন্ত ওনাদের যে বেপরোয়া গতি, এটা আমাদের দেশের চারিত্রিক বৈশিষ্ট না। ওনাদেরকে আমার ভীষণরকমভাবে আবেদন, ওনারা যেন দেশের মহানুভবতা মেন্টেন করে চলেন। এই যে এত কিছু ঘটছে, ওনাদের কোনো বিকার হচ্ছে না। তার মানে ওনারা ভ্রষ্ট। মাইন্ড ইজ নট ওয়ার্কিং ইন দ্য প্রপার ডিরেকশন, মাইন্ড ইজ নট প্রপার্লি ওয়াকিং। একটা সাধারণ মানুষের মাইন্ড ওনাদের না।
আরও পড়ুনঃ