পাবনায় মধু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানোর প্রত্যাশা
সরিষার হলুদ ক্ষেত, রবি ফসলের মাঠ আর ফলফলাদির বাগানে আসা মুকুলের সমারোহে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাবনার মওসুমী মৌয়ালরা। যারা বাক্সের সাহায্যে মধু সংগ্রহ করে থাকেন।
সরকারি হিসেবে পাবনা জেলায় চার হাজার ২০০টি মৌবাক্স বিনামূল্যে মৌয়ালদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। সরকারি টার্গেট রয়েছে ৫৮ টন মধু। আর মওসুমী শতাধিক মৌয়াল মাঠে নেমেছেন এ প্রক্রিয়ায় মধু সংগ্রহের জন্য। আর তাদের টার্গেট রয়েছে ২০০ টন মধু।
সরকারি আর বেসরকারি হিসেব মতে, কয়েক বছর ধরেই এ জেলায় টার্গেট অতিক্রম করছে মধু উৎপাদন। গত বছর সরকারিভাবে লক্ষ্যমাত্রা ৬৫ টন থাকলেও উৎপাদন হয়েছে ৭২ টন। আর বেসরকারি মৌয়ালদের উৎপাদন ছিল প্রায় ২০০ টন মধু।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বিগত দিনগুলোর মধু উৎপাদনের ধরণ হিসেবে ও মধুর উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবারে জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ঐ প্রকল্পের আওতায় মৌয়ালদের বিনামূল্যে বাক্স প্রদান করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা খোন্দকার মোতালেব হোসেন জানান, সরিষার ক্ষেতে মৌবাক্স স্থাপন করে দ্বিমুখী উপকার পাওয়া যায়। একদিকে মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করবে। এতে সরিষার পরাগায়ন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ফলন বেশি হবে। অন্যদিকে মধু বিক্রি করে লাভবান হবেন চাষীরা। সেই দিকগুলোকে সামনে নিয়ে কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ এবং মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলার সাঁথিয়া উপজেলার আত্রাইশুকা গ্রামের ভ্রাম্যমাণ মৌয়াল মাজেদ আলী বলেন, ‘এ জেলায় এবার শতাধিক ভ্রাম্যমাণ মৌয়াল রয়েছেন। প্রতিদিন একজন মৌয়াল ১০ থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত মধু আহরণ করতে পারেন। সে হিসেবে চলতি মৌসুমেও ২০০ টন মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।’
মৌচাষী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে শুধু মৌচাষীদের মধ্যে ৮০ টন মধু সংগ্রহের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া জেলায় ভ্রাম্যমান মৌয়ালরা বিভিন্ন বাসাবাড়ি ঝোঁপ-জঙ্গলও গাছের নির্মাণকৃত মৌচাক থেকে প্রচুর পরিমাণ মধু সংগ্রহ করেন।’
তিনি বলেন, ‘উৎপাদিত মধু ভারতের ডাবর, বাংলাদেশের প্রাণ ও স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। তবে সরিষা থেকে উৎপাদিত মধুর দাম কম পাওয়া যায়। বাজারে কালোজিরা ফুলের মধুর চাহিদা যেমন বেশি অনুরূপ দামও ভালো পাওয়া যায়।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আজাহার আলী বলেন, ‘পাবনায় সরিষার আবাদ বেশি হওয়ার কারণেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌয়ালরা এসে মধু সংগ্রহ করেন। চলতি মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় মধু উৎপাদন বাড়াতে একটি প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে। ঐ প্রকল্পের আওতায় মৌচাষীদের বিনামূল্যে মৌবাক্স প্রদান করা হয়।’
মৌচাষীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান আজাহার আলী। তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে পাবনা জেলার মুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫৮ টন । ইতোমধ্যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার পথে।’