টিভিতে বিপিএল, মোবাইলে জুয়া!

  • আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, নেত্রকোনা, বার্তা২৪
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চায়ের দোকানে বিপিএলের সাথে চলছে জুয়ার আসর ,ছবি: বার্তা২৪

চায়ের দোকানে বিপিএলের সাথে চলছে জুয়ার আসর ,ছবি: বার্তা২৪

টিভিতে নানা দলের খেলা, মোবাইল ফোনে জুয়া। দেশব্যাপী জুয়াড়িদের মোবাইল নেটওয়ার্ক। পাবনার সর্বত্র জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন যুব ও তরুণ সমাজ। স্কুল, কলেজ পড়ুয়া থেকে শুরু করে সিএনজি, বাস, করিমন, স্কুটার শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, সেলুনের নরসুন্দর থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষজন এই জুয়া খেলার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। জুয়া খেলে অনেকেই বহু টাকার মালিক হচ্ছেন কেউ বা আবার পুরোপুরি নিঃস্ব হচ্ছেন।

এলাকাবাসীদের অভিযোগ, শহর থেকে এই জুয়া খেলা এখন গ্রাম পর্যায়ে চলে এসেছে। মহাসড়কের চায়ের দোকান, পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে ছাউনি করে, গোপন কক্ষ তৈরি করে এই জুয়া খেলার আসর বসছে। কেউ বা ঘরে বসেই টিভি সেটে বসে মুঠোফোনের সাহায্যে এই জুয়া খেলায় ব্যস্ত।

বিজ্ঞাপন

তারা আরও বলছেন, বিপিএল ক্রিকেটসহ নানা সময়ে টিভিতে প্রদর্শিত যে কোন খেলায় খেলামোদি দর্শক যখন খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, ঠিক সে সময় এক শ্রেণির জুয়াড়ি জুয়া খেলায় মেতে ওঠেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো ভ্রুক্ষেপ না থাকায় ক্রমশ এর বিস্তার  হচ্ছে। ফলে যুব সমাজ বিপথগামী হচ্ছে। জুয়ায় টাকা হেরে গিয়ে অনেক যুবক চুরি ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

অনুসন্ধান করে জানা যায়, গত সপ্তাহে ঢাকায় শুরু হওয়া দেশ-বিদেশের তারকা ক্রিকেটারদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ক্রিকেট নিয়ে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে ক্রিকেট প্রেমীদের মনে। এ ক্রিকেট ঝড় সারা দেশের ন্যায় পাবনা জেলায় সর্বত্র ক্রিকেটপ্রেমী যুব সমাজের মাঝে বিরাজ করছে। এই যুব সমাজের একটি বড় অংশ এই খেলাটি জুয়ায় রূপান্তরিত করেছে। তারা খেলা দেখে জুয়ায় অংশ গ্রহণের জন্য।

বিজ্ঞাপন

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এই জুয়া খেলার ধরন হলো- প্রতি ২০ ওভারের ম্যাচে, প্রতি ওভারে রানের ওপর এবং বলে বলে ধরা হচ্ছে টাকার বাজি। কোন খেলোয়াড় বেশি রান করবে, কোন বোলার বেশি উইকেট পাবে, কোন ব্যাটসম্যান বেশি ছক্কা মারবে, কে বেশি চার মারবে, কোন বলে চার বা ছয় হবে এবং কোন দল জিতবে এসবের উপর প্রতি মুহূর্তে চলছে বাজিধরা। এভাবে প্রতিদিন এই উপজেলায় প্রায় কোটি টাকার ক্রিকেট জুয়া খেলা হচ্ছে বলে বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে। এই জুয়ার আসরে নতুন করে সম্পৃক্ত হচ্ছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, বেকার যুবক, রিকশা-ভ্যান চালক, গাড়ির স্টাফ, দোকান কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ।

পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান, অফিস, বাসা-বাড়ি, ক্লাব এমনকি যেখানেই টিভি সেখানেই চলছে বাজিধরা। এসব জুয়াড়িরা কৌশলগত কারণে অনেকটাই থেকে যাচ্ছে প্রশাসনের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে টিভি দেখে সহপাঠীদের সাথে ফোন, হোয়াটস্আপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বিভিন্ন অংকের টাকা বাজি ধরা হয়। অনেকে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশে-বিদেশেও বাজি ধরে থাকেন বলে জানা যায়। এভাবে উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজার ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ক্রিকেট জুয়ায় ভাসছে। ফলে ক্রিকেট জুয়ার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় যুবসমাজ।

পাবনা সদরের পৌর এলাকার আব্দুল হামিদ সড়কের আশপাশের কয়েকটি চায়ের দোকানে, রেস্টুরেন্টে, আটঘরিয়া ও দেবোত্তর বাজার ও আশপাশ, চাটমোহরের পৌর এলাকার নতুন বাজার, শাহী মসজিদ মোড় এলাকা, বাসস্ট্যান্ড, কলেজ গেট এলাকা, হাসপাতাল রোডের স্টলগুলো, বিল চলন ইউনিয়নের রাম নগর ঘাট, বোঁথর ঘাট, মূলগ্রাম ইউনিয়নের রেলবাজার, মূলগ্রাম নিচ বাজার, আটলংকা বাজার, মথুরাপুর ইউনিয়নের বাজার এলাকা, আনকুটিয়া বাজার, ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের বামনগ্রাম, কাটাখালীসহ ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, সাঁথিয়া, বেড়া, সুজানগর, ঈশ্বরদী উপজেলার সর্বত্রই ছেয়ে গেছে এই জুয়ার পরিধি।

সচেতন অভিভাবকরা চিন্তিত হয়ে পড়ছেন তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি পারে যুব সমাজকে বিপথগামী ও ধ্বংসের হাত থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, এমন কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমেই বিষয়টি জানার পর থেকে আমরা পুলিশি নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। সাদা পোশাকের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। কারা এই কাজের সাথে জড়িত, সুনির্দিষ্টভাবে জানতে এবং জড়িতদের ধরতে পারলেই এটা বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে জানান এএসপি গৌতম।