সবুজ আর হলুদের মিতালি যেখানে
সবুজ আর হলুদের মিতালিতে পরিপূর্ণ সরিষা ক্ষেত। যেখানে রয়েছে চোখ জুড়ানো অপার সৌন্দর্যের সমারোহ। সরিষা ক্ষেতের ওপর ভেসে থাকা কুয়াশা সকালবেলার প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে। প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য অবলোকনে ভারাক্রান্ত মনটিও যেন আনন্দে ভরে উঠবে।
হলুদ-সবুজের মিতালির দেশে সেলফিবাজরাও নানা ভঙ্গিমা ধারণ করে। সরিষা ক্ষেতে নানা প্রজাতির মাছি-মৌমাছি ও প্রজাপতির আনাগোনার শ্রেষ্ঠ স্থানও বলা চলে। সকালের সূর্যের ছোঁয়া পেতে গাঁয়ের বিভিন্ন বয়সীরা সরিষা ক্ষেতের পাশে বসে থাকে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের মজুচৌধুরীর হাট স্লুইস গেটের দক্ষিণ পাশের সরিষা ক্ষেতে গিয়ে এসব দৃশ্য দেখা যায়।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, সরিষা ক্ষেতের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছুটোছুটি করে স্কুলে যাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। তখন বই হাতে ও স্কুল ড্রেসে ছাত্র-ছাত্রীদের দেখে মনে হয় তারা হলুদের রাজ্যে মিশে গেছে। আবার বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সরিষা ফুল ছেঁড়া নিয়ে ভাই-বোনের খুনসুটিও বেশ মানানসই। ওই রাস্তাগুলো ব্যবহার করতে ভুলে না গ্রামের মেয়ে-বউসহ নানা বয়সী মানুষ। ওই পথ দিয়েই মাথায় বস্তাভর্তি মালামাল নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন গ্রামের কোনো এক মুরব্বি। শুকনো মৌসুমে সহজ যোগাযোগের মাধ্যমই ফসলের মাঝ দিয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তা।
দূর থেকে দেখা যায়, গরু ও লাঙ্গল দিয়ে জমিতে হাল চাষ দিচ্ছেন এক কৃষক। যার চারপাশেই সরিষা ক্ষেত। দূর থেকে মনে হচ্ছে, সরিষা ক্ষেত মাড়িয়ে ফসল নষ্টের কাজে ব্যস্ত তিনি। কিন্তু তা নয়, তিনি তার খালি জমিতে অন্য ফসল আবাদের লক্ষ্যে জমি প্রস্তুত করছেন।
অপরদিকে মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি- ‘নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের’ সেই কবিতার মতো মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে মৌমাছির দল। পুরোদমে তারা মধু সংগ্রহে সময় পার করছে। মনের অগোচরে তারা সরিষা ক্ষেতে এসে লুকোচুরি খেলছে। এর মাঝে যখন তারা হাঁপিয়ে যায় তখন নিরিবিলি হয়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। মধু সংগ্রহ করে আবার তারা উড়ে চলে যায় আপন নীড়ে। একই সঙ্গে সরিষা ক্ষেতে নানা প্রজাতির মাছি ও প্রজাপতির আনাগোনা অবিরত থাকে। বাদ যায় না পাখিরাও।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলাতে ২৭১ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ৭৫, রায়পুরে ১৬০, রামগঞ্জে ১৫, রামগতি ৫ ও কমলনগর ১৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর মজু চৌধুরীর হাট এলাকায় সরিষা ক্ষেতে ছবি তুলতে আসা আরাফাত রহমান অমি বলেন, ‘সরিষা ক্ষেত দেখতে খুব সুন্দর। ফুলের ঘ্রাণ বেশ মনোমুগ্ধকর। এ জন্য এখানে বন্ধুকে নিয়ে ছবি তুলতে এসেছি। এই জায়গায় বিভিন্ন মৌসুমে নানা প্রজাতির ফসলের চাষাবাদ হয়। সেসব ফসলের ক্ষেত দেখতেও ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে এখানে আসি।’