বগুড়া অঞ্চলে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ কমেছে
মাঠে রকমারি ফসল শোভা পেলেও ইদানীং বগুড়ায় গমের ক্ষেত তেমন একটা চোখে পড়ে না। নানা কারণে গম চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষকেরা। শুধু বগুড়া নয়, আশেপাশের জেলাগুলোতেও গম চাষ দিনকে দিন কমছে। কৃষকেরা বলছেন, ইরি-বোরো চাষ বেড়ে যাওয়ায় গমের আবাদ কমে যাচ্ছে।
তবে, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে গমের ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় কৃষকেরা গম চাষ আর করতে চাচ্ছেন না। এভাবে বগুড়াসহ আশেপাশের চার জেলায় গত পাঁচ বছরে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ কমেছে। এতে উৎপাদনও কমে এসেছে ৬২ হাজার মেট্রিক টন।
যেসব এলাকায় এক সময় প্রচুর গম চাষ হতো সেসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক গম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। সেসব জমিতে এখন আলু, বেগুন, কপি, সিম আর টমেটোর চাষাবাদ। শীতকালীন এসব সবজি এখন অনেক লাভজনক কৃষকের কাছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার গনেশপুর গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন জানান, পাঁচ বছর আগেও তিনি ৩-৪ বিঘা জমিতে গম চাষ করতেন। সেখানে এবার চাষ করেছেন মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে। আশেপাশের জমিতে ইরি-বোরো চাষ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ইরি ধানের সেচের পানি গমের জমিতে প্রবেশ করায় এবং গমের জমিতে ইঁদুরের উৎপাত হওয়ায় এর চাষ অলাভজনক ফসলে পরিণত হয়েছে।
তবে বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট থানার চরাঞ্চলে এখনও চোখে পড়ার মত গম চাষ হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চরের জমিতে পলি থাকায় তাদের জন্য গম চাষ লাভজনক। এছাড়া, চরের জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ না হওয়ায় জমি ফেলে না রেখে গম চাষ করে থাকেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলায় ২০ হাজার ১১৪ হেক্টর জমিতে গম চাষ কমে এসেছে। এরমধ্যে ২০১৫ সালে আবাদ হয়েছে ৫৫ হাজার ৮৪৭ হেক্টর জমিতে। ২০১৬ সালে ৫১ হাজার ১৩২ হেক্টরে, ২০১৭ সালে ৪৪ হাজার ৪৪০ হেক্টরে, ২০১৮ সালে ৩৫ হাজার ৬৫১ হেক্টরে এবং চলতি মৌসুমে গমের আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৩৩ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে চার জেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৯ হাজার ৫৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ২৩৮ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ কম হয়েছে।
তবে এ মৌসুমে বগুড়া ও জয়পুরহাটে গম চাষ সামান্য বেড়েছে। অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি গমের আবাদ হতো পাবনা ও সিরাজগঞ্জে, কিন্তু এ বছর এই দুই জেলায় গমের আবাদ একেবারেই কমে গেছে। ২০১৫ সালে পাবনায় গম চাষ হয়েছিল ৪৩ হাজার ৩২২ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ জেলায় গম চাষের পরিমাণ কমে গেছে ১৫ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে। একইভাবে, ২০১৫ সালে সিরাজগঞ্জে গমের আবাদ হয়েছিল ৮ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে। এ জেলাতেও ৫ বছরের ব্যবধানে গম চাষের পরিমাণ কমে গেছে ২ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, গত কয়েক বছর যাবৎ আবহাওয়ার বৈরিতার কারণে অর্থাৎ গম চাষের মৌসুমে অতিরিক্ত ঘন কুয়াশার কারণে গমের জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। এতে অনেক কৃষকই ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলে গম চাষ সার্বিকভাবে কিছুটা কমে এসেছে। তাছাড়া কৃষকরা মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, কপি ইত্যাদি লাভজনক ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়াও গম চাষ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।