নয় বছর ধরে বন্ধ তিনটি ছাত্রাবাস

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বগুড়া, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বন্ধ হয়ে থাকা ছাত্রাবাস, ছবি - বার্তা ২৪.কম

বন্ধ হয়ে থাকা ছাত্রাবাস, ছবি - বার্তা ২৪.কম

রাজনৈতিক সহিংসতার আশংকায় বিগত নয় বছর যাবৎ বন্ধ হয়ে থাকা বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের তিনটি ছাত্রাবাস চালু করা হচ্ছে না। ফলে গরীব ও মেধাবী ছাত্রদেরকে অধিক ভাড়া দিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

বন্ধ হয়ে থাকা তিনটি ছাত্রাবাসের মধ্যে ইতোমধ্যেই একটি ছাত্রাবাসের দরজা জানালা পর্যন্ত চুরি হয়ে গেছে। ফলে ছাত্রাবাসটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসগুলো সংস্কার কাজ শুরু করা হলেও চালু করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সাধারন ছাত্ররা।

বিজ্ঞাপন

সাধারন ছাত্ররা বলছেন, কলেজ প্রশাসন রাজনৈতিক সহিংসতার আশংকায় ছাত্রাবাসগুলো চালু করবে না। বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী সরকারি আজিজুল হক কলেজে (নতুন ভবন) বিভিন্ন বিভাগে প্রায় ৩০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী লেখা পড়া করে। সেখানে ছেলেদের ২৪০ জনের জন্য তিনটি এবং মেয়েদের ২০০ জনের জন্য ২টি হল রয়েছে। তার মধ্যে ছেলেদের তিনটি হল গত ৯ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/07/1549493538389.jpg

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালের শুরু থেকেই ছাত্রাবাসের দখল নিয়ে ছাত্রলীগের সাথে ছাত্রশিবিরের মাঝে মধ্যে সংর্ঘষ শুরু হয়। মার্চ মাসে রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ ছাত্রাবাস তিনটি তাদের দখলে নেয়। এরপর থেকে ছাত্রশিবির পুনরায় ছাত্রাবাস তাদের দখলে নেয়া চেষ্টা করলে একই বছরের ২০ ডিসেম্বর কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাস তিনটি আনুষ্ঠানিক ভাবে বন্ধ ঘোষনা করে।

তিনটি ছাত্রাবাসের মধ্যে একতলা বিশিষ্ট শেরেবাংলা ছাত্রাবাসটির জানালা দরজা পর্যন্ত চুরি হতে শুরু করে। অপর ২টি ছাত্রাবাস শহীদ তিতুমীর ও শহীদ আকতার আলী মুন ছাত্রাবাস থেকেও আসবাবপত্র বিভিন্ন কৌশলে চুরি হয়। এভাবে বছরের পর বছর কেটে গেলেও ছাত্রাবাসগুলো চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয় সহিংসতার আশংকায়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/07/1549493559597.jpg

কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবী সংস্কার ও আসবাবপত্রের অভাবে ছাত্রাবাসগুলো চালু করা যাচ্ছে না। কিন্তু সাধারন ছাত্ররা বলছেন ভিন্ন কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্র এবং শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কলেজের নিয়ম অনুযায়ী ছাত্রদের মাঝে সিট বরাদ্দ দেয়া হলে ছাত্র শিবিরের অধিকাংশ ছেলেরা বরাদ্দ পেয়ে যাবে। আর তখনই আবারো শুরু হবে রাজনৈতিক সহিংসতা। সহিংসতা এড়াতেই কৃর্তপক্ষ ছাত্রাবাস চালুর বিষয়ে অনাগ্রহ দেখায়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র রবিউল ইসলাম বার্তা২৪ কে জানান, ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ থাকায় তাদেরকে বাহিরে অধিক ভাড়া দিয়ে বসবাস করে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র শহিদুল ইসলাম বলেন, গরিব এবং মেধাবী ছাত্ররা কলেজের ছাত্রাবাসে বসবাস করতে পারলে তাদের পরিবারের উপর অর্থনৈতিক চাপ অনেকটা কমে যেত।

এদিকে শেরেবাংলা ছাত্রবাসের জানালা দরজা না থাকায় সেটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অনেকদিন আগেই। অপর দুইটি ছাত্রবাস চালু করার জন্য ইতিমধ্যে সংস্কার কাজ চলছে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শহীদ তিতুমীর ছাত্রাবাস ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং আকতার আলী মুন ছাত্রাবাস ২১ লাখ ৫০ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে। ২০১৬ সালেও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ছাত্রাবাস ২টি সংস্কার করেছিল। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাস ২টি চালু করেননি।

ছাত্রাবাস দুইটি চালু করার ব্যাপারে শহীদ তিতুমীর ছাত্রাবাসের সুপার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক শফি মাহমুদ বার্তা২৪ কে বলেন সংস্কার কাজ শেষ হলে ছাত্রাবাস চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে আসবাবপত্র না থাকায় চালু করতে আরো কিছুদিন সময় লাগতে পারে।

এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসগুলো চালু এবং নতুন ছাত্রাবাস নির্মান ছাড়াও বিভিন্ন দাবীতে বুধবার (০৬ ফেব্রুয়ারী) কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিল সমাবেশ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন কলেজ শাখার নেতাকর্মীরা। তারা অবিলম্বে সেমিনার ও লাইব্রেরীতে পর্যাপ্ত বই এর ব্যবস্থা এবং ছাত্র অনুপাতে শিক্ষক বৃদ্ধির দাবী জানান।

জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নাদিম মাহমুদ বার্তা২৪ কে বলেন উপরোক্ত দাবী ছাড়াও কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা ও ভোটার তালিকা তৈরীর দাবীতে ছাত্র ইউনিয়নের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।