তাড়াশে ঐতিহ্যবাহী দই মেলা
চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশে স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে দইয়ের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলাকে ঘিরে সারাদিন এলাকায় সাঁজ সাঁজ রব বিরাজ করছে। শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নামিদামি ঘোষদের দই আসার মধ্য দিয়ে তাড়াশের প্রায় ২৫০’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী দই মেলায় দইসহ মুড়ি, মুড়কি, চিড়া, গুড় রসনা বিলাসী খাবার বিকিকিনি চলে। ঐতিহ্যবাহী চলনবিলের তাড়াশে দই মেলা নিয়ে রয়েছে নানা গল্প কাহিনী।
তাড়াশ উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তি সৌরেন্দ্র নাথ ঘোষ জানান, তাড়াশের তৎকালীন জমিদার পরম বৈঞ্চব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। সাধারণত জনশ্রতি আছে তৎকালীন পরম বৈঞ্চব জমিদার রাজা রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। এ ছাড়া জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে ৩ দিনব্যাপী দই মেলা বসত। প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে মেলায় পসরা বসিয়ে বিকিকিনি করতেন।
কথিত আছে, সবচেয়ে ভাল সুস্বাদু দই তৈরি কারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন প্রদান করার রেওয়াজ ছিল। তবে জমিদার আমল থেকে শুরু হওয়া তাড়াশের দইয়ের মেলা এখনও মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে উৎসব আমেজে বসার বাৎসরিক রেওয়াজ এখনও আছে। দইয়ের মেলায় আসা এ অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে।
একাধিক ঘোষের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুধের দাম, জ্বালানী, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। তবে মেলা ১ দিনব্যাপী হলেও চাহিদা থাকার কারণে কোনো ঘোষের দই অবিক্রীত থাকে না। যার কারণে মেলার আগেই ঘোষেরা দই তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।