কবির নিথর দেহ দেখে শুভাকাঙ্ক্ষীদের আর্তনাদ
ঢাকা থেকে দ্বিতীয় জানাজা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজ জন্মভূমিতে কবি আল মাহমুদের মরদেহ পৌঁছাতেই শুরু হয় শুভাকাঙ্ক্ষীদের আর্তনাদ। সকলেরই চোখে টলমল করে জল। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এ কবির বিয়োগে হাহাকারে ছেয়ে যায় তার বাড়ির চারপাশ।
এভাবে প্রাণহীন নিথর দেহে কবির বাড়ি ফেরা মেনে নিতে পারছেন না কেউই। তাইতো মরদেহ বাড়ির উঠানে রাখার পরই শুরু হয় কবির স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের আর্তনাদ।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে কবি আল মাহমুদের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মৌড়াইল মহল্লায় পৈত্রিক নিবাসে এসে পৌঁছায়। এর আগে শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কবি আল মাহমুদ।
কবির নিকটাত্মীয় হাফিজুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কবির মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি শহরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে চারপাশে আহাজারি শুরু হয়। মনে হয়েছে আমরা আমাদের একজন অভিভাবক হারিয়েছি। আমাদের মাথার উপর থেকে ছায়া চলে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কবির শূন্যতা কখনো পূরণ করা যাবে না। বাংলা সাহিত্যে তার অবদান এই দেশের মানুষ মনে রাখবে। তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তার কর্মের মাধ্যমে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় জেলার সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কবির মরদেহ রাখা হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। এরপর সেখানে বাদ জোহর জানাজার নামাজ শেষে কবিকে নিয়ে যাওয়া হবে দক্ষিণ মোড়াইল কবরস্থানে। সেখানেই তার বাবা মায়ের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।
১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই মৌড়াইল মহল্লার মোল্লাবাড়িতে জন্ম নেয়া আল মাহমুদ দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকার কারণে মাঝে-মধ্যে অল্প সময়ের জন্য কবি ছুটে আসতেন মোল্লাবাড়িতে। তবে অভিমান করে বছর খানেক আগে থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাতায়াত বন্ধ করে দেন তিনি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন কবি আল মাহমুদ। ১৯৭৪ সালে দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক থাকাকালে কারাবরণ করেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক পদ থেকে অবসর নেন তিনি। সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি একুশে পদক ও বাংলা একাডেমিসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।