২৩ বছরেও হয়নি আকসু নির্বাচন, স্থবির কর্মকাণ্ড

  • গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বগুড়া, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ছাত্র সংসদ ভবন / ছবি: বার্তা২৪

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ছাত্র সংসদ ভবন / ছবি: বার্তা২৪

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভবন থাকলেও নেই ছাত্র সংসদ। ১৯৯৬ সালের পর কলেজটিতে দীর্ঘ ২৩ বছরেও কোনো ছাত্র সংসদ (আকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৭ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করার মতো কেউ নেই। পাশাপাশি নেতৃত্বের কোনো বিকাশ ঘটছে না, মান সম্পন্ন ছাত্র নেতাও তৈরি হচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি থেকে। একই সঙ্গে স্থবির হয়ে আছে সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড।

তবে ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণা আসার পর থেকে ছাত্র ইউনিয়ন আকসু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তারা মিছিল, মিটিং থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নির্বাচনের আমেজ তৈরির কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্রলীগও নির্বাচনের দাবি জানিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিল সমাবেশ করেছে।

জানা গেছে, ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ চালু ছিল। ওই সময় ছাত্রদল থেকে রাশেদুজ্জামান মাসুম ভিপি, ছাত্র শিবিরের ইউছুব আলী জিএস এবং ছাত্রলীগের আমিনুল ইসলাম ডাবলু এজিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘ ২৩ বছর পার হয়ে গেলেও আর কখনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। অথচ ২০০৯ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের থেকে ভর্তির সময় ২৫ টাকা করে ছাত্র সংসদের জন্য জমা নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পর ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির মুখে ২০১৭ সালে মেরামত ও সংস্কার করে ছাত্রদের কমন রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ছাত্র সংসদ না থাকায় খেলাধুলা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চা স্থবির হয়ে আছে বছরের পর বছর।

আজিজুল হক কলেজে বর্তমানে ২৩টি বিভাগে ৩৭ হাজার ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত। কলেজে ছাত্র সংসদ (আকসু) চালু থাকাকালে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করত। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কলেজে ছাত্রদল এবং ছাত্র শিবির প্রভাব বিস্তার শুরু করে। সে সময় কলেজের আধিপত্য নিয়ে ছাত্র শিবির এবং ছাত্রদলের মধ্যে সহিংসতা চলত।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/18/1550462114942.jpg

বিজ্ঞাপন

এরপর দুই বছর জরুরি অবস্থা চলাকালে সকল রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ২০০৯ সাল থেকে আবারও শুরু হয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। ছাত্র শিবিরের সঙ্গে ছাত্র লীগের কয়েক দফা সংঘর্ষের পর কলেজ থেকে ছাত্র শিবির রাজনৈতিকভাবে বিদায় নেয়। পরে ছাত্রদলও প্রকাশ্যে আসতে পারে না কলেজ ক্যাম্পাসে। ফলে গত ১০ বছর ধরে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করছে ছাত্রলীগ। কিন্তু তারাও এতদিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে জোরাল ভূমিকা রাখেনি।

মিথুন, নয়ন, পারভেজের মতো কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া জরুরি। কলেজের সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করার মতো কেউ না থাকায় তাদেরকে নানা কাজে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কোনো সমস্যায় পড়লে সাধারণ ছাত্রদেরকে রাজনৈতিক ছাত্রগংঠনের নেতাদের কাছে ধরনা দিতে হচ্ছে। এছাড়া ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতারা সাধারণ ছাত্রদেরকে সাধারণ হিসেবেই মূল্যায়ন করে থাকে।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু ছাত্র প্রতিনিধিত্ব না থাকায় দক্ষ নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না।

ছাত্র ইউনিয়নের বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি নাদিম মাহমুদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বর্তমানে আজিজুল হক কলেজে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন এবং প্রগতিশীল ছাত্র জোট প্রকাশ্যে তাদের কর্মসূচি করছে। অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি নেই। ছাত্র ইউনিয়ন সর্ব প্রথম ৩ জানুয়ারি আকসু নির্বাচন নিয়ে কর্মসূচি দেয়। ইতোমধ্যেই ছাত্র ইউনিয়ন কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিল, সমাবেশ, ছাত্র-ছাত্রীদের সচেতনা বাড়ানোর জন্য লিফলেট বিতরণ এবং শহরে পোস্টারিং করেছে।’

আজিজুল হক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সারা দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন রাজনৈতিক কারণে বন্ধ ছিল। ডাকসু নির্বাচনের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। তার পরও আকসু নির্বাচনের দাবিতে ছাত্রলীগ ইতোমধ্যেই কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিল সমাবেশ করেছে।’

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষা বর্ষে আকসু জিএস আমিনুল ইসলাম ডাবলু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘রাজনীতিতে মান সম্পন্ন নেতৃত্ব তৈরিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি। দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না থাকায় দক্ষ নেতা তৈরির অন্তরায় হয়ে উঠেছে। এছাড়া একটি প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ না থাকলে জবাবদিহিতা থাকে না।’

কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শাজাহান আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা পেলে এবং সরকার ইচ্ছা পোষণ করলেই আকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে কলেজ প্রশাসন উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’