মাছকাটা নারী শ্রমিকের মজুরি পেটা
গোপালগঞ্জে শুঁটকি পল্লীগুলোতে মাছকাটার বিনিময়ে নারী শ্রমিকদের দেওয়া হয় তার পেটা। আর পারিশ্রমিক হিসেবে মাছের পেটা নিয়ে খুশি তারা। এ কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছে হাজার হাজার নারী।
জানা গেছে, গোপালগঞ্জের ১০ হাজার ৮৯০ হেক্টর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ঐতিহ্যবাহী চান্দার বিল। এখানের জেলে সম্প্রদায়ের লোক মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়াও জেলার পাঁচটি উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য বিল। আর এসব বিলের জেলেদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের মাছ কিনে শুঁটকি তৈরি করে প্রস্তুতকারীরা। শুঁটকি তৈরির জন্য মাছ কাটা হয়। আর এসব মাছ কাটে অসংখ্য নারী শ্রমিক। মজুরি বাবদ তারা কেজি প্রতি পান ৮-১০ টাকা। যদি টাকা না নেন তাহলে পান মাছের পেটা। এই পেটা বিক্রি করে শ্রমিকরা বেশি অর্থ পান।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোপালগঞ্জে শুঁটকি শুকানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে ছোট বড় প্রায় ২ হাজার মাচা। মাছের আঁশের পচা গন্ধে মাছি ভনভন করছে। আর কাকডাকা ভোর থেকে মাছ কাটতে আসে প্রায় ৩ হাজার নারী শ্রমিক। শুঁটকির মাচার পাশে গোল হয়ে দা-বটি নিয়ে ছোট প্রজাতির টেংরা, পুঁটি, মলা, টাকি, মেনি মাছ কাটতে বসে যায় তারা।
মাছ কাটতে আসা জোসনা বৈরাগী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা খুব ভোর থেকেই কাজ করি। প্রতিদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত কাজ করে ৮০ থেকে ১০০ টাকা মজুরি পাই। তবে মজুরি বাবদ মাছের পেটা নিলে তা বিক্রি করে বেশি টাকা পাই। আমি এখান থেকে আয় করে পরিবারের ব্যয় নির্বাহের জন্য স্বামীকে সাহায্য করতে পারি।’
আরেক শ্রমিক উজলী বালা বলেন, ‘আমরা অনেকেই এখানে মাছ কাটার কাজ করি। বেশি কাজ করলে বেশি মজুরি পাই। তবে আমি দৈনিক ৮ থেকে ১০ কেজি মাছ কাটতে পারি। এখান থেকে পেটা নিয়ে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে যায়।’
শুঁটকি প্রস্তুতকারী অমল বালা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন যাবৎ শুঁটকি তৈরি ও বিক্রি করে আসছি। শুঁটকি তৈরির জন্য এখানে মাছ কাটতে এসে অনেকেই মজুরি হিসেবে টাকা না নিয়ে পেটা নেয়। আগের তুলনায় বর্তমানে দেশীয় মাছ কম পাওয়া যায়। দাম বেশি থাকায় শুঁকটি তৈরি ও বিক্রি করে আগের মতো তেমন লাভ হচ্ছে না। তাই শ্রমিকদেরও বেশি মজুরি দিতে পারছি না। তবে আমার এখানে মাছ কাটার কাজ করে অনেক নারী শ্রমিকই এখন স্বাবলম্বী।’