হত্যা মামলার তিন বছর
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান তনুর মা
কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার তদন্ত তিন বছরেও কোনপ্রকার অগ্রগতি হয়নি। এমনকি এ মামলার আসামিও শনাক্ত হয়নি।
তনুর পরিবারের অভিযোগ, গত এক বছর তদন্ত কাজ স্থবির হয়ে আছে। তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তনুর পরিবারের সঙ্গে মামলার বিষয়ে যোগাযোগ করছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বুধবার (২০ মার্চ) বার্ত২৪.কম-কে বলেন, 'সিআইডির কর্মকর্তারা প্রথম থেকেই বলে আসছেন তারা দ্রুত ঘাতকদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন। তাদের এমন আশ্বাসের কথা শুনে শুনে আজ তিনটি বছর পার হয়ে গেল, কিন্তু আশার আলো এখনও দেখছি না। দেখব কিনা তাও জানি না। গত এক বছর ধরে সিআইডি কর্মকর্তাদের কোনো খবর নেই।'
তিনি বলেন, 'এখন আমার একটাই ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাই। আমার আবেগ ও কষ্টটা ওনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে বলতে চাই। কারণ তিনিও একজন মা। একজন মা বোঝেন সন্তান হারানোর বেদনা।'
মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বার্ত২৪.কম-কে বলেন, 'দেশের মানুষ এই ঘটনার সত্যিটা জানতে তাকিয়ে রয়েছে। সিআইডি মামলাটি নিয়ে আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ রক্ষা করছে না।'
তনুর পারিবারিক সূত্র জানায়, তনু হত্যার ঘটনায় ২০১৬ সালের ২১ মার্চ তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এ পর্যন্ত এই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তিনবার বদল করা হয়। ২০১৬ সালের ২১ মার্চ তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ পান ওই থানার উপ-পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম। ওই বছরের ২৫ মার্চ তদন্ত ভার দেয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি এ কে এম মঞ্জুর আলমকে।
২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত তদন্ত করেন সিআইডির কুমিল্লার পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম। পরে তদন্ত ভার পান সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন। ২০১৬ সালের ১৬ মে তনুর পোশাকে পাওয়া বীর্য পরীক্ষা করে তিনজনের ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া গেছে বলে সিআইডি জানিয়েছিল। এরপর তনুর পোশাকে পাওয়া তিনটি ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে সন্দেহভাজন কয়েকজন ব্যক্তির ডিএনএ মেলানো হয়। তবে কোনো ফল আসেনি। জালাল উদ্দিন তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর কয়েকজনের সঙ্গে ডিএনএ মেলানোর উদ্যোগ নেন।
এর মধ্যে তনুর নাট্য সংগঠন ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের পাঁচজন কর্মীর সঙ্গে ডিএনএ মেলানো হয়। ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর সকালে সিআইডির সদর দফতরের নতুন ভবনে তনুর বাবা, মা, ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেল, চাচাতো বোন লাইজু জাহান ও চাচাতো ভাই মিনহাজ হোসেন গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে সার্জেন্ট জাহিদের নাম বলেন।
এ বিষয়ে গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার অন্যতম সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'একটি মামলা এভাবে স্থবির থাকতে পারে না। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দেখতে চায় দেশের ১৬ কোটি মানুষ।'
কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক সুমী আক্তার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'তনু আমার সরাসরি ছাত্রী। বেঁচে থাকলে আগামী ৭ এপ্রিল তনু অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিত। তার জন্য আজ বিভাগের পক্ষ থেকে শোক র্যালি ও মিলাদ হবে।'
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এ মামলার তদন্তের অগ্রগতি নেই তা বলা যাবে না। আমাদের কাজে কোনো স্থবিরতা নেই, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।'
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে টিউশনি করাতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেনি তনু। অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাতে তনুদের বাসার অদূরে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গলে তার রক্তমাখা মরদেহ পায় স্বজনরা। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ঘাতকদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।