হবিগঞ্জে বিশুদ্ধ পানি সংকটে ৮০ শতাংশ মানুষ

  • কাজল সরকার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, হবিগঞ্জ, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হবিগঞ্জে বিশুদ্ধ পানি সংকটে মানুষ

হবিগঞ্জে বিশুদ্ধ পানি সংকটে মানুষ

পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু হবিগঞ্জে সর্বত্র নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার ৮০ শতাংশ নলকূপে আর্সেনিক ধরা পড়েছে। এছাড়া, পৌরসভার পানিতেও রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত জীবানু। সব উৎস মিলিয়ে জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ পানি পান করছে। ফলে জীবন রক্ষাকারী পানি মরণঘাতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জেলা গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার ৮০ শতাংশ অগভীর নলকূপের আর্সেনিক ধরা পড়েছে। এর মধ্যে নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলায় অসহনীয় মাত্রায় রয়েছে প্রতি লিটারে ০.০৫ ভাগের বেশি আর্সেনিক। জেলার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পরিবার অসহনীয় মাত্রা ০.০৫ ভাগের উপরে আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করেছেন। আর সব উৎস থেকে অনিরাপদ পানি পান করে ২০ শতাংশ মানুষ। ফলে আর্সেনিকে আক্রান্ত্রের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

তথ্যমতে জেলায় ৩ লাখ ৬২ হাজর ১৫৫টি পরিবার নলকূপে পানি পান করেন। সরকারিভাবে জেলায় ২২ হাজার ৬১১টি শ্যালো এবং গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যেও ত্রুটিজনিত কারণে ১ হাজার ৩৬৭টি নলকূপ অকেজো অবস্থায় পরে রয়েছে। চালুকৃত নলকূপের সংখ্যা ২২ হাজার ২৪৪টি।

এদিকে, ৭০ ফুট থেকে ১৪০ ফুট গভীরে স্থাপন করা নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের অসহনীয় মাত্রা ০.০৫ ভাগের উপরে রয়েছে। যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। ১৮০ থেকে ২৬৫ ফুট গভীরে স্থাপনকৃত নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা সহনীয়। কিন্তু শুকনো মৌসুমে নলকূপের পানির লেয়ারের স্তর নিচে নেমে আসায় তখন নলকূপগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এসময় পানি সংকটের কারণে  মানুষ  ০.০৫ মাত্রার বেশি আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করেন। তবে ৫০০ থেকে ৭১৫ ফুট নিচে স্থাপকৃত গভীর নলকূপের পানিতে কোন আর্সেনিক এখন পর্যন্ত ধরা পরেনি। যে উৎস থেকে পানি পান করে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ।

বিজ্ঞাপন

জেলা গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকৌশলী ফিরোজ আলম চৌধুরী জানান, জেলার নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলায় সবচেয়ে বেশি নলকূপগুলোতে অসহনীয় মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া গেছে। ওই দু’টি উপজেলা ঝুঁকি পূর্ণতায় রয়েছে। নলকূপের পানি গণস্বাস্থ্য বিভাগ অফিসে নিয়ে আসলে আমরা পরীক্ষা করে থাকি। এছাড়াও লোকজন জানালে আমাদের অফিস থেকে লোক গিয়ে নলকূপের পানি পরীক্ষা করেন।

তিনি বলেন, প্রতি লিটার পানিতে ০.০৫ ভাগের উপরে আর্সেনিকের মাত্রা হলে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। যদি সহনীয় মাত্রা আর্সেনিক থাকে সেটিতে সবুজ রং লাগানো হয়। এতে ওই নলকূপের পানি পান করা যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়।

এদিকে, পৌরসভার পানিতেও মাত্রাতিরিক্ত জীবানু রয়েছে বলে দাবি পৌর নাগরিকদের। এ ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার অভিযোগ করেও কোন কাজে আসছে না বলে অভিযোগ তাদের।

জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ পৌরসভার পানি ব্যবহার করে থাকেন। যে পানিতে মাত্রাতিরিক্ত জীবানু রয়েছে। পৌরসভার পানি ব্যবহারকারীদের  চর্ম রোগের দেখা দিয়েছে। যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

পৌর নাগরিকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার পানি সাপ্লাইয়ের পাইপগুলো পরিষ্কার না করার কারণে পানিতে জীবানুর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

এ ব্যাপারে জানতে হবিগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র দীলিপ দাসের সাথে ফোনের যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অপরদিকে, দীর্ঘদিন ধরে বিশুদ্ধ পানি সংকটে ভুগছে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল। হাসপাতাল চত্বরে ৪টি টিউবওয়েল থাকলেও দীর্ঘদিন ধরেই তা অকেজো অবস্থায় রয়েছে। নামেমাত্র পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও পানি সংরক্ষণের ট্যাংক ময়লার স্তুপে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় শতাধিক লোক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। সেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আয়ের। অথচ হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের পিছনে একটিমাত্র পানির ট্যাংক। আবার এটিও খোলা আকাশের নিচে ঢাকনা বিহীন অবস্থায় রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রথীন্দ্র চন্দ্র দেব বলেন, ‘পানি আর্সেনিক মুক্ত করতে কোন ব্যবস্থা তাদের কাছে নেই। পানি সংকট দূর করতে আরো টিউবওয়েল বসানোর চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া অন্যান্য সমস্যার সমাধান করা হবে।’