স্বপ্ন পূরণে এইচএসসি পরীক্ষায় বসছেন প্রতিবন্ধী হাসান

  • কাজল সরকার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, হবিগঞ্জ, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. হাসান মিয়া / ছবি: বার্তা২৪

এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. হাসান মিয়া / ছবি: বার্তা২৪

হাসান, ক্ষুদ্র এই নামটি হতে পারে লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা। কারণ দু’টি পাই বিকল, তবুও নিজের ইচ্ছা শক্তিতেই জীবন নামের মহাসমুদ্র পাড়ি দিতে চান তিনি। প্রতিবন্ধী জীবনের সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে এগিয়ে যেতে চান দুর্বার গতিতে। কখনো দেয়াল ঘেঁষে, আবার কখনো লাঠি ভর করে দাঁড়ানো মানুষটি আলোকিত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে আজ সোমবার (০১ এপ্রিল) বসছেন এইচএসসি পরীক্ষায়।

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা মৃত সিদ্দিক মিয়ার ছেলে হাসান। সম্পূর্ণ নাম মো. হাসান মিয়া। ছয় ভাই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত হাসান জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাই বলে কি থেমে থাকবে জীবন? কখনো না! তাইতো, শিক্ষার আলোয় নিজেকে আলোকিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ায় প্রচণ্ড ঝোঁক ও অদম্য ইচ্ছা শক্তির বদৌলতে প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ঠেলে সৈয়দ সাঈদ উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন হাসান। নিজ কলেজ কেন্দ্রেই পরীক্ষা দেবে এই শিক্ষার্থী। এর আগে ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৩.৮৫ পেয়ে ঊত্তীর্ণ হন হাসান।

হাসানের বড় ভাই আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘হাসান প্রতিবন্ধী হলেও লেখা পড়া করার খুব ইচ্ছা। কিন্তু দরিদ্রতা আমার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবারের ছয়জন মানুষের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আমাকেই সামলাতে হচ্ছে। আবার হাসান ছাড়াও চার বোনের লেখা পড়ার খরচও আমাকেই দিতে হয়। ছোট একটি ব্যবসা থেকে এতগুলো দায়িত্ব সামলাতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আর পারছি না। কয়েক বছর পর বোনদের বিয়ে দিতে হবে। অথচ আমার কাছে এক টাকাও সঞ্চয় নেই। হয়তোবা কিছু দিন পর ভাই-বোনদের লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হবে।’

এ বিষয়ে এইচএসসি শিক্ষার্থী হাসান বলেন, ‘আমি কলেজে আসলে রিকশা করে আসতে হয়। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০ টাকা খরচ হয়। যা আমার বড় ভাই অনেক কষ্ট করে ব্যবস্থা করে দেন। আমি অন্য দশ জনের মতোই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একটি সরকারি চাকরি করতে চাই।’

সৈয়দ সাঈদ উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জাহির উদ্দিন বলেন, ‘হাসান প্রতিবন্ধী হলেও তার মনে অনেক জোর আছে। লাঠি ভর দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কলেজে আসে সে। আমরা তাকে কলেজ থেকে বই খাতা ও উপবৃত্তি দিয়ে আসছি। আমরা আশা করছি হাসান এইচএসসি পরীক্ষাতেও ভাল ফলাফল অর্জন করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসান তার ইচ্ছে শক্তিতেই এত দূর এসেছে। তবে সরকারি, বেসরকারি ও বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে উঠতে পারে হাসানের জীবন।’