মরার আগে হারানো ছেলেকে দেখতে চান গিয়াস

  • রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ), বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মরার আগে হারানো ছেলেকে দেখতে চান গিয়াস। ছবি: বার্তা২৪.কম

মরার আগে হারানো ছেলেকে দেখতে চান গিয়াস। ছবি: বার্তা২৪.কম

মরার আগে হারানো ছেলেকে দেখে যেতে চান ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ভাংনামারী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বৃদ্ধ গিয়াস উদ্দিন (৬৭)। এজন্য এক হাজার ২০০ টাকা খরচ করে তিনি স্থানীয় কবিরাজের কাছে গিয়ে মানতও করেছেন।

জানা গেছে, দাম্পত্য জীবনে গিয়াসের এক স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে মেয়ে বিউটির বিয়ে হয়েছে। বড় দুই ছেলে সজল ও আনোয়ার বিয়ে করে আলাদা হয়েছে। আর ছোট ছেলে দেলোয়ার ৫ বছর আগে দুর্গাপুরে ফুপুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজার পরেও তার সন্ধান মেলেনি। ছেলের কোনো ছবি না থাকায় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন কিংবা সন্ধান চাই পোস্টার, লিফলেট ছাপাতে পারেননি তিনি। তবে গিয়াসের আশা ছেলে ফিরে আসবেই। এজন্য তিনি গ্রামের কবিরাজের দারস্থ হয়ে মানতও করেছেন।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৭ এপ্রিল) বিকেলে ভাংনামারী ইউনিয়নের অনন্তগঞ্জ বাজারে দেখা মেলে গিয়াস উদ্দিনের। একটি ভ্যানগাড়িতে বসে তিনি ঝালমুড়ি বিক্রি করছিলেন। ঝালমুড়ি খেতে খেতে কিছুক্ষণ কথা হয় তার সঙ্গে। এ সময় তিনি জীবনে পাওয়া না পাওয়ার নানা গল্প শোনান এই প্রতিবেদককে।

গিয়াস উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সংরামের (সংগ্রামের) কয়েক বছর পরের কথা। গেরামে তহন অভাব। কোনোহানে কাম-কাইজ নাই। দুই-তিন দিন পর একবার ভাত খাই। একদিন ক্ষুধার জ্বালায় ঘরের শীল-পাডা বেইচ্যা কামের খোঁজে ঢাকায় গেলাম। প্রথমে কয়েক বছর রিকশা চালাই। পরে কাঁচা বাজারের ব্যবসা। চল্লিশ বছরের মতো ঢাকায় থাইক্যা সংসার করছি, পোলাপাইন হইছে। অহন বয়স বাড়নে খাটা-খাটনি করতে পারি না। দুই বছর হইল পরিবার নিয়া গ্রামে আইছি। তয় বাড়িত বইয়া থাকলে তো বুড়া-বুড়ির পেটে ভাত জুটতো না। তাই পেটের দায়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ কই্যরা বড় হইছি। ভাবছি পোলাপাইন বড় হইলে আর কষ্ট করা লাগবো না। কিন্তু পোলাপাইন আমার খোঁজ নেয় না। আবার ঢাকার ভোটার হওয়ার কারণে নিজ ইউনিয়ন থেইক্যা বয়স্ক ভাতাও পাই না। সংসারডা কষ্ট কইরা চালাইতে গেলেও মাসে ৭-৮ হাজার টেকা লাগে। অসুইখ্যা শইল (শরীর) লইয়া আর পারি না। কোন দিন যে মইরা যাই।’

জানা গেছে, প্যাডেল চালিত ভ্যানগাড়ি নিয়ে গ্রামের হাটবাজারে ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন গিয়াস। তার এখানে ঝালমুড়ি ছাড়াও চকলেট, চানাচুর, আচার, বুট, বাদামসহ বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায়। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা বিক্রি হলে অর্ধেক লাভ হয় তার। এই টাকা দিয়েই চলে তার সংসার ও চিকিৎসার খরচ।

গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে গল্প করতে করতে বিকেলের সূর্য পশ্চিমে হেলেছে। বাজারের ল্যাম্পপোস্টে জ্বলে উঠেছে আলো। এমন সময় তার এখানে ঝালমুড়ি খেতে আসেন স্থানীয় এক যুবক। ঝালমুড়ি খেতে খেতে ওই যুবক হারানো ছেলেকে পেয়েছেন কিনা জানতে চান।

জবাবে গিয়াস বলেন, ‘নারে বাজান অহনো খুঁজ পাই নাই। তোমার চাচি রাইতের বেলা ছেলের জন্য কান্নাকাটি করে। মরার আগে আমারও শেষ ইচ্ছা ছেলের মুখডা এক নজর দেহার। ছেলের খুঁজের জন্য কয়দিন আগে কবিরাজকে এক হাজার ২০০ টেকা দিছি। আল্লাহর রহমতে মনে হয় এইবার ছেলের খুঁজ পাওয়া যাইবো। তোমরা বাজান একটু দোয়া কইরো।’