পরীক্ষাকে পুঁজি করে অধ্যক্ষের কু-প্রস্তাব!

  • শাহরিয়ার হাসান ও ফয়েজুল ইসলাম, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পরীক্ষা শেষে বান্ধবী নুসরাতের মৃত্যুশোকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সহপাঠীরা, ছবি: বার্তা২৪

পরীক্ষা শেষে বান্ধবী নুসরাতের মৃত্যুশোকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সহপাঠীরা, ছবি: বার্তা২৪

ফেনীর সোনাগাজী থেকে: অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার অত্যন্ত খারাপ লোক। যার ফলে আমার বান্ধবীকে আজ মরে যেতে হলো। স্যারের লালসার শিকার অনেকেই হয়েছিল। আমার শরীরে পর্যন্ত সে হাত দিয়েছিল। সে সময়ও আমরা দুই বান্ধবী প্রতিবাদ করেছি। পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভীতি দেখিয়ে প্রায় সবাইকে কু-প্রস্তাব দিতেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) আলিম পরীক্ষায়, আল ফিকাহ প্রথম পত্র পরীক্ষা শেষে হল থেকে বের হয়ে বার্তা২৪.কম-কে অধ্যক্ষ সিরাজ সম্পর্কে এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন নুসরাত জাহান রাফির বান্ধবী নাসরিন সুলতানা ফুর্তি।

বিজ্ঞাপন

নাসরিন সুলতানা ফুর্তি বলেন, 'অধ্যক্ষ খুব খারাপ চরিত্রের লোক। সব মেয়েরাই সেটা জানে। এমন কোন মেয়ে নাই যার হাত তিনি ধরেনি। সে আমাকেও ছাড়েনি আমার শরীরেও হাত দিয়েছিল। এ ঘটনায় আমি সর্বপ্রথম নুসরাতকে বলেছিলাম। নুসরাত ঐদিন আমার বিষয় নিয়ে সিরাজ স্যারের সঙ্গে ঝগড়া করেছিল।'

এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, নুসরাতের অন্য বান্ধবীরা পরীক্ষা হল থেকে বেরিয়ে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে নুসরাতের কথা বলতে চিৎকার করে কান্না করেন।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/11/1554976371666.jpg

নুসরাতের চিঠিতে যে বান্ধবীর নাম আছে, সেই তানজিনা আক্তার সাথি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'প্রতিবাদী ছিল নুসরাত। ওর প্রতিবাদে আমরা শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সাহস সঞ্চয় করেছিলাম। এমনকি ইউএনও বরাবর আমরা একটি দরখাস্ত লেখার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু কোনো এক কারণে সেটা জমা দেয়া হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'সিরাজ স্যার পরীক্ষার ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমাদের কু-প্রস্তাব দিতো। অনেক গরীব শিক্ষার্থী আছে। তারা হয়তো সে টাকা দিয়ে নতুন করে পরীক্ষা দিতে পারবে না। যার ফলে তারা কখনোই প্রতিবাদ করতে আসেনি। সেই সুযোগ নিতো সিরাজ স্যার।'

নুসরাতের সাহসিকতা সম্পর্কে সহপাঠী মাহিলা রিতা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'এখানে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নুসরাতকে দেখে এসেছি। যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে আগে যেত নুরসাত। ছাত্রী হিসেবেও অনেক ভালো ছিল নুসরাত। এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিল। যদি সবগুলো পরীক্ষা দিতে পারতো, যদি কোনো ক্ষতি না হতো। এবারও ভালো রেজাল্ট করতো।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রথম থেকেই অনেক বিষয়ে প্রতিবাদ করায় নুসরাতকে উত্ত্যক্ত করতো অধ্যক্ষ। হয়তো শিক্ষক মনে করেছেন, নুসরাতকে উত্ত্যক্ত করলে আর কোন মেয়ের হয়ে প্রতিবাদ করতে আসবে না।'

আরও পড়ুন: বাড়ির পথে নুসরাতের মরদেহ