১০ বছর ধরে চিকিৎসকের অপেক্ষায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র!
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এমবিবিএস চিকিৎসকের পদ থাকলেও চেয়ার শূন্য। ১০ বছরেও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। রোগীদের মতো স্বাস্থ্য কেন্দ্রও চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছে। চিকিৎসকের বিপরীতে এখানে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন অনভিজ্ঞ উপ-সহকারী কমিউনিটি কর্মকর্তা। এমন পরিস্থিতির দেখা মেলে, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দুটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। এ কারণে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিন দিন রোগীদের চাপ বেড়েই চলেছে।
কেন্দ্র দুটির মধ্যে একটি রায়পুর উপজেলার উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়নের হায়দরগঞ্জ বাজারে হায়দরগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও অপরটি বামনী ইউনিয়নের সাইচা গ্রামে বামনী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রতিনিয়তই চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে। দ্বারপ্রান্তে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, হায়দারগঞ্জ ও বামনী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুটির একটিতেও কোনো চিকিৎসক নেই। একজন করে চিকিৎসকের (এমবিবিএস) পদ থাকলেও তা ১০ বছর ধরে শূন্য পড়ে আছে। হায়দরগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন ও বামনী উপসহকারী কমিউনিটি কর্মকর্তা শামীম হোসেন স্থানীয়দের সেবা দিয়ে আসছেন। যাদের কাজ চিকিৎসকের পরামর্শে রোগীদের ওষুধ দেওয়া।
এ বিষয়ে অভিযোগ করে হায়দরগঞ্জ এলাকার শাহাদাত গাজী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হঠাৎ ঠান্ডা ও গরমের কারণে আমার পরিবারের দু’জন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসা পাওয়া যায়নি। পরে ১১ কিলোমিটার দূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এভাবে গ্রামের অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মাইলের পর মাইল দূরে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। অর্থ সংকটের কারণে গ্রামের লোকজন অনেক সময় চিকিৎসা নিতে ব্যর্থ হন।’
উত্তর চর-আবাবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহিদ উল্যাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রায় ১০ বছর ধরে কোনো চিকিৎসক নেই। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চরাঞ্চলের লোকজন। হায়দরগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। সেখানে গিয়ে গ্রামের অনেকেই চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না।’
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জাকির হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর প্রভাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেশি পড়ছে। প্রতিদিন ৪ থেকে পাঁচ শতাধিক রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসে। চিকিৎসকের জন্য প্রতি মাসেই সিভিল সার্জনকে অবগত করে প্রতিবেদন পাঠানো হচ্ছে। তবে আশা করছি অচিরেই চিকিৎসক সংকট দূর হবে।’
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন মোস্তফা খালেদ আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র দু’টিতেই চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। সরকার থেকে বর্তমানে কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। যখন নিয়োগ দেওয়া হবে, তখন শূন্য পদগুলোও পূরণ করা হবে।’