বাতাসে দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন

  • মনিরুজ্জামান বাবলু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, চাঁদপুর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

খলায় ধানের স্তূপ, ছবি: বার্তা২৪

খলায় ধানের স্তূপ, ছবি: বার্তা২৪

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় ফসলের মাঠজুড়ে বাতাসে দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্নের আমন ধান। চলতি বছর প্রচুর ঝড়বৃষ্টি, পোকা মাকড়ের আক্রমণ আর নানা রোগ বালাইয়ের পরও এবার ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সুবাস পাচ্ছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ।

উপজেলার কৃষক পরিবারের মাঝে এখন ধানের মৌ মৌ গন্ধ। ধান কাটা আর মাড়াইয়ে যেন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা।

বিজ্ঞাপন

সরকারি হিসেবে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা এ বছর ব্যাহত হবে না বলে ধারনা করা যায়। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও দারুণ খুশি। তবে গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও নানা কারণে বাড়তি খরচ হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ধানের ন্যায্য দাম আশা করেছেন তারা।

হাজীগঞ্জ উপজেলায় একটি পৌরসভা ও বারটি ইউনিয়নের কৃষি মাঠে এ বছর প্রায় সাড়ে নয় হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা চলতি বছরের শুরুতে কৃষকরা জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ করেছে।

বিজ্ঞাপন

হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯ হাজার পাঁচশ হেক্টর জমিতে এবার ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিগত বছরে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ইরি আবাদে বাম্পার ফলন হয়। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রায় ৫০ হেক্টর জমি কম থাকলেও বাম্পার ফলনের আশাবাদী বলে জানায় কৃষি অধিদফতর।

কিন্তু খরচের তুলনায় ধানের ন্যায্য মূল্য না থাকার ফলে এবার কৃষকরা ইরি-বোরো আবাদে কম ঝুঁকতে দেখা যায়। তার পরেও শেষ দিকে এসে আলু, সরিষার মতো রবি শস্যের ফলন উঠার পর কৃষকরা জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করেছে।

বাতাসে দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন

কেউ জমিতে খলা বানিয়ে, কেউবা বাড়ির আঙিনা বা উঠানে খলা বানিয়ে সেখানে ধানের ঘের তৈরি করে মিশিন ও মটকার উপর ধান ঝরিয়ে উত্তোলন করতে দেখা যায়। বিশেষ করে এ বছর বৃষ্টি আর ঝড়ের তীব্রতা দেখে অনেকে আগে-বাগে ধান কাটা শুরু করে দিয়েছে। অনেক কৃষকের ঘরে চাউল না থাকায় দেখা যায় নতুন ধান পেয়ে ভাফ দেওয়া শুরু করেছে। ধান কাটা থেকে শুরু করে খড়ের স্তূপ পর্যন্ত যেসকল শ্রমিক প্রয়োজন সে তুলনায় সংকট দেখা দেওয়ায় উত্তর বঙ্গ থেকে কিছু মৌসুমি শ্রমিদেরকেও কাজ করতে দেখা যায়।

কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ছোট বড় দেড় শতাধিক কৃষি মাঠ রয়েছে। যা থেকে এ বছরেও ফসল উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় দশ হাজার মেট্রিক টন। তবে এ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গত কয়েক বছর ধরে সমান ভাবে থাকলেও চলতি বছর অনেক কৃষকই সার ও কীটনাশক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ইরি-বোরো চাষাবাদ না করে রবি শস্য উৎপাদনে মনোনিবেশ হয়েছে বেশি।

এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় কৃষকরা চলমান চাষাবাদের খরচের সাথে ধান বিক্রয় কালে ন্যায্য মূল্য না পাওয়া। তাছাড়া দক্ষিণ অঞ্চলের কৃষি মাঠগুলো থেকে একাধারে ব্রিক ফিল্ড মালিকরা মাটি উত্তোলনের কারণেও চাষাবাদে ব্যাঘাত ঘটতেছে। এছাড়াও প্রাকৃতিকসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে দিন দিন ধান উৎপাদন কমে যাচ্ছে এ উপজেলায়।

এদিকে গত কয়েক যুগ ধরে উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ মাঠে দুই ধরনের ফসল উৎপাদন হয়ে আসছে। উত্তর মাঠে দেখা যায় বর্ষার সময় আউশ ধানের ফলনসহ খরা মৌসুমে ইরি ধানের ফলনও উৎপাদন করছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। আর দক্ষিণ অঞ্চলের মাঠগুলো নিচু হত্তয়ার কারণে ও একাধিক ব্রিক ফিল্ড গড়ে উঠায় শুধু মাত্র খরা মৌসুমে ইরি-বোরো চাষাবাদ ছাড়া অন্য কোন ফসল উৎপাদন করতে দেখা যায় না।

কথা হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মনি সূত্রধর বলেন, 'চলতি মৌসুমে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রায় সাড়ে নয় হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ হয়েছে। সেই লক্ষে কৃষকরা জমি পরিচর্যার কাজ থেকে শুরু করে পোকা দমনে ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে ভাল ফলনের আশাবাদ রয়েছে।' সে সাথে সরকারি বীজের প্রজেক্টগুলোতেও ভাল ফলন হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সরকারি প্রাপ্তি সাপেক্ষে আনুমানিক ৪০টি প্রদর্শনী হয়েছে। এই ৪০টি প্রজেক্টের মাধ্যমে আমরা পুরো উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে একেক টি ইউনিয়নে ২/৩টি করে প্রদর্শনীতে কাজ করেছি।