গণপরিবহনে নিরাপত্তা ও অধিকার চায় যাত্রীরা
যাত্রী সেবাই দেশের গণপরিবহনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় এখানেও ঝুঁকিতে থাকছে যাত্রীদের জীবন। এছাড়া প্রতিবন্ধী, প্রবীণ আর নারীদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো আসন বরাদ্দ নেই। নেই বাসগুলোতে জনসচেতনাতামূলক কোনো প্রচার-প্রচারণা।
সচেতন মহল আর যাত্রীরা বলছেন, তাদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিতকরণে সরকারি কোনো পদক্ষেপ না থাকায় দেশে গণপরিবহন ব্যবস্থায় আধুনিকতার ছোঁয়া লগেনি। অসুস্থ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার দেশে গণপরিবহনেও তাদের জীবন নিরাপদ থাকছে না। অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
অন্যদিকে পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে, তারাও প্রয়োজন বোধ করে যাত্রী নিরাপত্তায় গণপরিবহনে আধুনিক সব ব্যবস্থা রাখা হোক। তবে এক্ষেত্রে সরকারি আইন থাকলে সবাই মানতে বাধ্য হবে।
দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থাপনাগুলোতে দেখা যায়, যাত্রীদের আরাম আয়েশের জন্য অনেক ব্যবস্থা রাখা হলেও নিরাপদ যাত্রা কিংবা সচেতনতামূলক কোনো প্রচার প্রচারণার ব্যবস্থা নেই। নেই প্রতিবন্ধী, প্রবীণ যাত্রী কিংবা নারীদের জন্য নির্দিষ্ট আসন বরাদ্দ। নেই অগ্নিনির্বাপণের সুবিধা। ফলে কোনো দুর্ঘটনায় যেমন যাত্রীদের জীবন হানির আশঙ্কা থাকছে বেশি, তেমনি অধিকার বঞ্চিত হয়ে ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা। আর অধিকার হারাচ্ছেন প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী যাত্রীরা।
ভারত ফেরত বাংলাদেশি যাত্রী চম্পা রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ ভারতের কথা যদি বলি, অনেক আগেই তারা মানবিক বোধ থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও অধিকারে সোচ্ছার। ভারতের গণপরিবহনগুলোতে বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে অগ্নিনির্বাপণ ব্যাবস্থা, বিপদের মুহূর্তে বের হওয়ার আলাদা গেট, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ নাগরীকের জন্য নির্দিষ্ট সিট বরাদ্দ আছে। নারীদের জন্য রাখা হয়েছে প্রায় পুরুষদের সমপরিমান আসন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া বাসগুলোর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে জনসচেতনতামূলক নানান প্রচার-প্রচারণা। শুধু গণপরিবহনে না ট্রেনগুলোতেও একই ব্যবস্থা রয়েছে। যা আমাদের দেশে পরিবহন বা ট্রেনগুলোতে এখন পর্যন্ত এমন আধুনিকতা বা সভ্যতার ছোঁয়া লাগেনি।’
বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা আমিনুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আগ্নিকাণ্ড আমাদের দেশে এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। তাই এখনই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। এ ক্ষেত্রে ভালো কিছুর জন্য যে কোনো দেশ বা ব্যক্তিকে অনুসরণ করা যেতে পারে।’
বেনাপোল সরগম সংগীত অ্যাকাডেমির সভাপতি মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের দেশে গণপরিবহনে নারীদের জন্য নিদিষ্ট আসন না থাকায় প্রতিনিয়ত তারা বখাটে যাত্রীদের দ্বারা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। মানবিক মূল্যবোধ কমে যাওয়ায় বাসে উঠে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় প্রতিবন্ধী কিংবা প্রবীণ অসহায় মানুষগুলোকে। একই সমস্যা রয়েছে ট্রেনগুলোতেও। তাই গণপরিবহন বা ট্রেনে নারী আর অসহায় মানুষদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
বাংলাদেশ মহিলা আইনজিবী সমিতির যশোর শাখার আইনজিবী নাসিমা আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এখন বাসে উঠলেই নারীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। এসব প্রতিরোধে বাসে নারীদের জন্য সিট বরাদ্দসহ কিছু বাধ্যতামূলক আইন দরকার। যাত্রীদের নিরাপত্তায় ট্রেন ও বাসগুলোতে সব ধরনের সুবিধা থাকবে এটা যাত্রীদের অধিকারের মধ্যেও পড়ে।’
এটা নিশ্চিত করণে সরকারকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থায় এগিয়ে আসতে হবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
যশোর জেলা বাস মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোসলেম উদ্দীন পাপ্পু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরাও প্রয়োজন বোধ করি যাত্রী নিরাপত্তা ও অধিকারের আদায়ের জন্য গণপরিবহনে আধুনিক ব্যবস্থা রাখা হোক। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারি আইন থাকলে সবাই মেনে চলতে বাধ্য হবে।’