এক সড়কের ৩ মালিকানা, দুর্ভোগে ২ লক্ষাধিক মানুষ

  • গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বগুড়া, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গর্তে পরিণত হয়েছে সড়কটি / ছবি: বার্তা২৪

গর্তে পরিণত হয়েছে সড়কটি / ছবি: বার্তা২৪

বগুড়া-চন্দনবাইশা সড়ক। পূর্ব বগুড়ার দুটি উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ। বগুড়া শহরের চেলোপাড়া থেকে সারিয়াকান্দি উপজেলার কড়িতলা পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির নাম চন্দনবাইশা সড়ক। সড়কটির মালিকানা বারবার পরিবর্তন হওয়ায় প্রায় একযুগ ধরে সংস্কার নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এই সড়কে চলাচলকারী মানুষদের।

২৪ কিলোমিটার সড়কটির মালিকানা বগুড়া পৌরসভা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সরকারের এ তিনটি প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন সময় নিজ নিজ অংশ সংস্কার করে থাকে। দেখা গেছে, পৌরসভার অংশ সংস্কার করা হলে এলজিইডির অংশ খানা খন্দে ভরা থাকে। আবার এলজিইডি সংস্কার করলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অংশের সড়কে দেখা যায় বড় বড় গর্ত। তিন বিভাগের মধ্যে কোনো সমন্বয় না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ সারা বছর লেগেই থাকছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় চন্দনবাইশা সড়কটি ছিল জেলা পরিষদের অধীনে। সড়কটি সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যয় হতো জেলা পরিষদের বরাদ্দ থেকে। এরপর সড়কটি চলে যায় এলজিইডির অধীনে। এলজিইডির বরাদ্দ থেকে সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণ কাজ চলা অবস্থায় ২০০৬ সালে বগুড়া পৌরসভার এলাকা বর্ধিত করা হলে সড়কটির আড়াই কিলোমিটার অংশ বগুড়া পৌরসভা দাবি করে। ফলে এলজিইডি আড়াই কিলোমিটার অংশ বাদ রেখে বাকি অংশে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে থাকে।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/22/1555912437972.jpg

এদিকে বছরের পর বছর বগুড়া পৌরসভার বরাদ্দ না থাকায় চেলোপাড়া থেকে দ্বিত্বীয় বাইপাস মহাসড়ক পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার অংশ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। অপরদিকে সড়কটির মাঝামাঝি গাবতলী উপজেলার পাঁচমাইল নামক স্থান থেকে বালিয়াদীঘি তিনমাথা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিয়ে নেয়।

বগুড়া পৌরসভার অংশ সংস্কারের জন্য এলজিইডি ও পৌরসভার মধ্যে এক বছর ধরে পাঁচ দফা চিঠি চালাচালির পর পৌরসভা সড়কটির আড়াই কিলোমিটার অংশের দাবি ছেড়ে দিয়ে এলজিইডিকে চিঠি দেয়। শেষ পর্যন্ত গত চার মাস আগে এলজিইডি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে আড়াই কিলোমিটার অংশ সংস্কার ও মেরামত করে চলাচলের উপযেগী করে তোলে।

বিজ্ঞাপন

এলজিইডি পৌরসভা এলাকার আড়াই কিলোমিটার আংমসহ পাঁচমাইল পর্যন্ত আরো পাঁচ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করে। কিন্তু পাঁচ মাইল থেকে গোলাবাড়ি বাজার হয়ে বালিয়াদীঘি তিনমাথা পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ বিভাগে থাকায় সে অংশটুকু সংস্কার ছাড়া পড়ে আছে বছরের পর বছর।

এই অংশের সড়কে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। শহরে যাতায়াতের একমাত্র এ সড়কটির সাত কিলোমিটার অংশে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক জুড়ে খানাখন্দে ভরপুর।

গাবতলীর রানীরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজে প্রতিদিন শহরে যেতে হয়। ভাঙা সড়কে চলাচল করতে গিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না। কিন্তু এ দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই।’

সিএনজি চালিত অটো রিকশা চালক দুলাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি যানবাহনের যন্ত্রাশং বিকল হচ্ছে সড়কের খানা খন্দের কারণে।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/22/1555912501162.jpg

এই সড়কে নিয়মিত যাতায়াত করেন সরকারি চাকরিজীবী আবু রায়হান। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সারা বছরই এই সড়কে কোনো না কোনো এলাকায় খানাখন্দ থাকছেই। ফলে এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কখনো শেষ হয় না।’

বগুড়া জেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী লাল মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বগুড়া সদরের অংশ সংস্কার ও মেরামত করা হয়েছে। এই অংশে চলাচলে মানুষের কোনো দুর্ভোগ নাই ‘

গাবতলী উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পাঁচ মাইল থেকে বালিয়াদীঘি তিনমাথা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়ক ও জনপথ বিভাগ এলজিইডির কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে। ফলে ওই অংশটুকু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাবতলী এলজিইডির অংশে কোনো খানাখন্দন নেই। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাত কিলোমিটার অংশে চলাচলে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।’

রোববার (২১ এপ্রিল) বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে অফিস সূত্রে জানা গেছে, বরাদ্দ না থাকায় সাত কিলোমিটার অংশ মেরামত করা যাচ্ছে না।