আমের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কাটা হচ্ছে গাছ!
আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এখানকার আমের সুনাম শুধু দেশে নয় রয়েছে বিশ্বজুড়ে। চাঁপাইয়ের আম মানেই সুস্বাদু। সেই সুনাম ও ভালো দাম পাওয়ার কারণে জেলার অধিকাংশ জমিতে গড়ে উঠেছিল আম বাগান। যেখানে ধান ছাড়া কোনো ফসল উৎপাদন হতো না, সেখানেও এখন চোখে পড়বে ছোট বড় আম বাগান। কিন্তু আমের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে অনেকেই এখন কেটে ফেলছেন গাছ। তৈরি করছেন অন্য বাগান।
নাচোল, গোমস্তাপুর ও সদর উপজেলায় গিয়ে জানা যায়, ভালো দামের আশায় এসব এলাকার বেশ কিছু ধানি জমিতে তৈরি করা হয় আম বাগান। কিন্তু আমের বেশি বেশি বাগান তৈরি এবং বাজার অব্যবস্থার কারণে বর্তমানে ক্ষতিরমুখে পড়তে হয়েছে আমবাগান মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের। যার ফলে বর্তমান সময়ে আমের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে অনেকে ক্ষোভে আম গাছ কেটে ফেলেছেন। আর তৈরি করছেন অন্য ফল গাছের বাগান।
বিশেষ করে কানসাট, মুসলিমপুর, চৌডালা, সেলিমাবাদ, ছত্রাজিতপুর ও মহারাজপুর এলাকায় বেশ কিছু আম বাগান কেটে ফেলার দৃশ্য দেখা গেছে।
কানসাট পার্বর্তীপুর এলাকার আবদুল কাদির বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমের নায্য মূল্য না পাওয়ার ক্ষোভে ৩০ বছর বয়সী প্রায় ১২টি আম গাছ কেটে ফেলতে হয়েছে। এখন এ বাগানে অন্য ফসল আবাদ করার কথা ভাবছি।’ৎ
একই কথা জানালেন মুসলিমপুর এলাকার আমবাগান মালিক সেরাফত মন্ডল। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রায় ৪বছর ধরে আমের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। বাগানে যে টাকা খরচ হয় তার অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছে না। বাগান পরিচর্চায় যে পরিমাণ সার, বিষ ও কীটনাশক ব্যবহার করেছি সে টাকাও আম বিক্রি করে উঠছে না। ফলে বাগান কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছি।’
একই অভিযোগ করেন মহারাজপুর এলাকার আরেক বাগান মালিক শামসুর রহমান। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, গত মৌসুমে পাঁচ বিঘা বাগানে আম উৎপাদন করতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করেছিলেন। সে আম বিক্রি করেন মাত্র সোয়া লাখ টাকায়। তিনি খরচের টাকা উঠাতে না পেরে বাগানে পরিচর্চা করছেন না।
আমের এমন দুর্দশা চলতে থাকলে বাগান কেটে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকতে হবে বলেও মনে করছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম আমিনুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অনেকে বাগান কেটে ফেলছে। আবার কেউ নতুন বাগান তৈরি করার জন্য আম বাগান কেটে ফেলছে।’
তার দাবি, শিগগিরই সুদিন ফিরে আসছে আমের বাজারে। চলতি মৌসুম হতেই আম সংশ্লিষ্টরা ন্যায্য দামে তাদের উৎপাদিত আম বিক্রি করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রায় ৩২ হাজার হেক্টোর জমিতে আম বাগান রয়েছে। তাতে ৩ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।