দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরির ক্যান্টিনে পণ্যের মূল্য নিয়ে অরাজকতা
দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের অন্যতম প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এই রুট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার ছোট বড় বিভিন্ন ধরণের যানবাহন চলাচল করে। সাধারণ যাত্রীরা নদী পার হয় সাধারণত লঞ্চ অথবা ফেরিতে।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীদের জিম্মী করে এক শ্রেণির অসাধু প্রভাবশালী ফেরির ক্যান্টিন মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের গায়ে লেখা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দাম আদায় করছে। মাঝে মাঝেই স্থানীয় প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করলেও থামাতে পারছে না এ অসৎ কর্মকাণ্ড।
ফেরির ক্যান্টিন মালিকরা স্থানীয় ও প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনের অভিযান কোনই কাজে আসছেনা। বরং অভিযানে জরিমানা আদায় করা হলে জরিমানাকৃত টাকা সুকৌশলে যাত্রীদের কাছ থেকেই উঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ২৮ এপ্রিল দেশের প্রথম মাল্টিমিডিয়া অনলাইন পত্রিকা বার্তা ২৪.কমে ‘ফেরিতে পানের দোকানের ভাড়া মাসে অর্ধ লক্ষ টাকা’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজবাড়ী কার্যালয়ের কর্তৃপক্ষ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচল সকল ফেরিতে ‘এই ফেরিতে নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা হয়’ লেখা ব্যানার টানানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে নিদের্শ দেয়। তারই প্রেক্ষিতে ১ মে থেকে এই নৌরুটের সকল ফেরিতে ব্যানারটি টানানো হয়।
কিন্তু ব্যানার টানানো হলেও কোন উপকারেই আসছেনা ভোক্তাদের। বাস্তবতা পুরোটা ভিন্ন। নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রির ব্যানার টানানো থাকলেও কর্তৃপক্ষ সেই আগের মতোই অতিরিক্ত দাম হাকাচ্ছে ভোক্তাদের কাছ থেকে।
সরেজমিনে ভাষা শহীদ বরকত ফেরিতে গিয়ে এর প্রমাণও পাওয়া যায়। যাত্রী বেশে একটি পানির বোতল কিনতে গেল দোকানদার ২০ টাকা চেয়ে বসেন। অথচ পানির নির্ধারিত মূল্যে ১৫ টাকা। ফেরিতে নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করার ব্যানারটি দেখিয়ে প্রশ্ন করলাম কেন বেশি নিচ্ছেন? প্রশ্ন করার সাথে সাথেই দোকানদার রেগে উঠেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ঐ ফেরির ক্যান্টিন ম্যানেজার ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। ম্যানেজ না হওয়ায় ফেরি থেকে নেমে আসার সময় হাত ধরে অনুরোধ করেন যেন এ বিষয়টি নিয়ে কোন রিপোর্ট না করি।
তাহলে কেন আপনারা ক্রেতাদেরকে ঠকাচ্ছেন এমন প্রশ্ন করলে ভাষা শহীদ বরকত ফেরির ক্যান্টিন ম্যানেজার বার্তা ২৪.কমকে জানান, তাদের অনেক খরচ হয়। তাছাড়া অতিরিক্ত টাকায় দোকান ভাড়া নেওয়ার কারণে আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতি পণ্যের উপর ৫ টাকা করে বেশি দাম নেই।
অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রির বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজবাড়ী কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো: শরিফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, বিষয়টি খুবই দুংখজনক। আমরা বারবার অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করার পরেও যদি তারা ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকে তবে এটি কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরো জানান, খুব দ্রুতই আবার অভিযান চালানো হবে। অভিযান চলাকালীন সময়ে যদি অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রমাণ মেলে তাহলে আমরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের সর্বোচ্চ ধারা প্রয়োগ করব। প্রয়োজন হলে ঐ দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে। সবার আগে আমরা ভোক্তাদের স্বার্থ দেখব। এখানে কোন ধরণের আপোষ চলবেনা। যদি কেউ অতিরিক্ত দাম নেওয়ার ভিডিও আমাদেরকে দিতে পারেন তাহলেও তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আরও পড়ুন: ফেরিতে পানের দোকানের..