পাসপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে রোহিঙ্গা নারীসহ আটক ৬
বান্দরবানে জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে আত্মীয় পরিচয়ে রোহিঙ্গা নারীর পাসপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে গ্রামপুলিশ-রোহিঙ্গা নারীসহ ছয়জন আটক হয়েছেন।
আটক ছয়জনের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান ও গ্রামপুলিশের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট তৈরিতে দুই লাখ টাকা আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (২৮ মে) তাদের আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, উখিয়া পালংখালী রেজিস্টার্ডভুক্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ছৈয়দ হোসেনের মেয়ে রেজিয়া বেগম (২০), নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) আবদুল মালেক (৩৮), রোহিঙ্গা নারীর পিতা পরিচয়দানকারী মো. জাকারিয়া (৪৮), ছৈয়দ হোসেন, এলম খাতুন, রাজিয়া বেগম (সাইকা)।
স্থানীয়রা জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিসহ একটি সিন্ডিকেট অর্থের বিনিময়ে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা নারী পুরুষদের ভোটার ও পাসপোর্ট করে দিচ্ছেন। এসব জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে জন্মনিবন্ধন, জাতীয় সনদসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এ কাজে বাংলাদেশি নাগরিকদের পিতা-মাতা সাজিয়ে কাগজপত্রগুলো তৈরি করে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করে আসছে সংঘবদ্ধ এ চক্রটি। এরই অংশ হিসেবে রোহিঙ্গা নারী রেজিয়াকে পাসপোর্ট করে দেওয়ার জন্য দুই লাখ টাকায় চুক্তি করে চৌকিদার আব্দুল মালেক। চুক্তি অনুযায়ী অর্থের বিনিময়ে পাসপোর্টের জন্য নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মনিবন্ধন, জাতীয়সনদ, হেডম্যান সনদসহ পাসপোর্ট ফরম সত্যায়ন করিয়ে নেন চৌকিদার মালেক।
আর সেই ভুয়া কাগজ সত্যায়িত করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তছলিম ইকবাল চৌধুরী। অভিযোগ রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পিতাসহ পূর্বপুরুষেরাও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ছিলেন।
অভিযুক্ত নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছৈয়দ হোসেনের মেয়ে রেজিয়ার একটি পাসপোর্ট ফরম সত্যায়িত করেছি। কিন্তু আটক হওয়া রেজিয়াকে আমি চিনি না। আটক ছৈয়দ হোসেন তার মেয়ে অসুস্থ বলে প্রতারণা করে আমার কাছ থেকে সত্যায়িত করে নিয়েছেন ফরমসহ কাগজপত্রগুলো। কোনো ধরণের অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে আমি জড়িত নই।
এ দিকে আটক হওয়া জাকারিয়া বলেন, চৌকিদার মালেক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কাগজপত্র সম্পাদনসহ পাসপোর্ট করে দেওয়ার জন্য দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী আমরা ফরম জমা দিতে এসেছিলাম। কিন্তু জেলা প্রশাসকের ঝটিকা অভিযানে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, দালাল ও চৌকিদারের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা নারী মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য মনোয়ারা নামের একজন নারীর কাগজপত্র সংগ্রহ করে নিজেই মনোয়ারা সেজে পাসপোর্ট করতে এসেছিল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। আরেকজন অন্যের মেয়ে পরিচয়ে কাগজপত্র সত্যায়ন করে পাসপোর্ট বানাতে এসেছিল। খবর পেয়ে দালাল-চোকিদারসহ ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, রোহিঙ্গা নারী সাইকার বাড়ি মিয়ানমারের রাখাইনের মুংডু জেলার বুচিডং এলাকায়। বর্তমানে তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীর চাকমার কুল শরণার্থী ক্যাম্পের শরণার্থী। তার কাছে শরণার্থী কার্ডও রয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করার পেছনে কারা জড়িত। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।