রাতের আঁধারে পাপড়ি মেলে ‘ধুতরা ফুল’
পড়ন্ত বিকেল। লালবর্ণ ধারণ করেছে অস্তগামী সূর্য। সন্ধ্যাটা তখন পুরোপুরি নামার অপেক্ষায়। ঠিক সেই মুহূর্তে গাছের ডগায় গুটিশুটি হয়ে থাকা ধুতরা ফুল পাপড়ি মেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সন্ধ্যার আঁধার বাড়ার সাথে সাথে এই বিপন্নপ্রায় উদ্ভিদের ফুলটি সম্পূর্ণ পাপড়ি মেলে তাকাবে প্রকৃতির পানে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকালে ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনে রেললাইনের পাশের গাছগাছালির ঝোপে গুটিশুটি হয়ে থাকা ধুতরা ফুলের এই সৌন্দর্য ধরা পড়ে বার্তা২৪.কম-এর ক্যামেরায়।
ধুতরো বা ধুতরা গাছ আমাদের দেশে সবার কাছেই কম-বেশি পরিচিত। দেশের প্রায় সব জায়গাতেই অযত্ন অবহেলায় এ গাছ জন্মাতে দেখা যায়। এমনকি দুই হাজার ৫০০ মিটার উচ্চতায়ও ধুতরা গাছ জন্মে। ইংরেজি নাম : Datura, Jimsonweed, Stinkweed, Madapple, Thornapple, Stramonium. উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম: Datura Stramonium. গোত্র : Solanaceae.
ধুতরা ফুল দিনের আলোতে গুটিশুটি হয়ে সারাদিন গাছের ডালে ঝুলে থাকে। আবার সন্ধ্যা ফিরে এলেই পাপড়িগুলো মেলে ধরে রাতের আঁধারে। রাতে জেগে উঠে বলে এই ফুলটিকে অনায়সে ‘রাতকুমারী’ও বলা যেতে পারে। কেননা প্রকৃতির অন্ধকারই তাকে জাগিয়ে রাখে, পূর্ণ করে তোলে।
ধুতরা গাছ ঝাড় বিশিষ্ট হয়। উচ্চতা এক মিটারের মতো। পাতা বড়, ত্রিকোণাকৃতির। রং সবুজ, শিরা ও মধ্যশিরা স্পষ্ট। ধুতরা গাছের ফুলের সৌন্দর্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোরম।
বাংলাদেশে সাদা ও কালো রঙের ধুতরা ফুল চোখে পড়ে। সাদা রঙের ধুতরার বোঁটা, পাতা ও গাছ হালকা সবুজ রঙের ও কালো রঙের ধুতরা গাছের পাতার বোঁটা ও গাছ বেগুনি মিশ্র রঙের।
বর্ষাকালে গাছে ফুল ফোটা শুরু হলেও হেমন্তকালজুড়ে গাছে ফুল দেখা যায়। ফুল শেষে গাছে ফল হয়, ফল গোলাকার, ফলের গায়ে ছোট-ছোট কাঁটায় ভরা থাকে।
গৌরীপুরের বৃক্ষপ্রেমী মোতালিব বিন আয়েত বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ধুতরা ভেষজগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ। কিন্তু বন-জঙ্গল উজাড়, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে গাছের অস্তিত্ব বর্তমানে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়াও এক শ্রেণীর অপরাধীরা চেতনানাশক পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করে গাছটিকে নির্মূল করে ফেলছে।’