পানিতে ডোবা রাস্তায় চলে অটোরিকশা, ভয়শূন্য যাত্রী-চালক
ঋতুর পরিক্রমায় বাংলাদেশের প্রকৃতিতে চলছে বর্ষাকাল। একটু একটু করে বর্ষা সাজছে তার চিরচেনা রুপে। নদ-নদী, খাল-বিল বর্ষার পানিতে টইটম্বুর। ডুবেছে মাঠ-ঘাট। এমনকি বর্ষার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে গ্রামীণ কাঁচা, আধা কাঁচা ও পাকা রাস্তাগুলো। আর এসব ডুবে যাওয়া রাস্তা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে অটোরিকশা। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
বলছিলাম হবিগঞ্জের গ্রামীণ রাস্তাগুলোর কথা। মূলত হবিগঞ্জ একটি হাওর বেষ্টিত জেলা। বর্ষা মৌসুমে এখানে মাঠ-ঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় নৌকা দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়।
শুষ্ক মৌসুমে এইসব গ্রামে যাওয়ার জন্য কাঁচা, আধা কাঁচা ও পাকা তিন ধরনের রাস্তা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেই রাস্তাগুলো ৬ মাস ব্যবহার করা যায়। আর বর্ষা মৌসুমে এই রাস্তাগুলো ডুবে যায়। তখন ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী লোকজনের নৌকাই একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায়।
তবে ডুবে যাওয়া এসব রাস্তা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী আনা-নেওয়া করে কিছু লোভী প্রকৃতির অটোরিকশা চালক। আর জীবনের ভয় না থাকায় ওই পথে চলাচল করে যাত্রীরাও।
সোমবার (৮ জুলাই) সকালে এমন দৃশ্য দেখা যায় জেলার লাখাই উপজেলার ডিসি সড়কে। লাখাই বাজার থেকে চিকনপুর ব্রিজ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা পাঁকা করা। তবে নিম্নাঞ্চল হওয়ায় প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাটি। কিন্তু অটোরিকশা চালকরা বেশি ভাড়া আদায়ের লোভে পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তা দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী আনা-নেওয়া করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ৩ কিলোমিটার সড়কের কোনো অংশই দৃশ্যমান নয়।
স্থানীয়রা জানায়, এই রাস্তায় রয়েছে একাধিক ভাঙা। আর দীর্ঘদিন ধরে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে পাকা অংশ ছাড়া রাস্তার দু’পাশের মাটি নরম হয়ে আছে। সেই সঙ্গে রাস্তার দু’পাশে খাল-বিলসহ রয়েছে একাধিক কালভার্ট। ডুবে যাওয়া রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায় সময়ই ঘটছে ছোট ছোট দুর্ঘটনা। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই চলছে সিএনজি অটোরিকশা, টমটম। আর সময় বাঁচাতে কোলের শিশুসহ বৃদ্ধ নারী-পুরুষ সকলেই হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে চলছেন এই রাস্তা দিয়েই।
এ বিষয়ে যাত্রীরা জানায়, নৌকা চলাচল কম থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
সাইফুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘এখান দিয়ে নৌকা চলাচল একদম কম। দুই-তিন ঘণ্টা পরপর একটি নৌকা ছাড়ে। তাই জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও এই টমটম-সিএনজি অটোরিকশা দিয়েই যেতে হচ্ছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা সুমেন্দ্র দাস জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তা দিয়ে লাভের আশায় চালকরা যেমন গাড়ি চালাচ্ছেন, তেমনি যাত্রীদের মনেও ভয় নেই।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চালক বলেন, ‘যাত্রীরা যদি যায়, তাহলে আমাদের সমস্যা কী? যাত্রীরা না গেলেইতো আর আমরা গাড়ি চালাই না। তাছাড়া রাস্তা আমাদের ভালো করেই চেনা আছে। রাস্তার কোথায় ভাঙা আছে, আর কোথায় কালভার্ট আছে সব আমাদের জানা। সুতরাং দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই।’
এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. জাহানারা বেগম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।’