বগুড়ায় ঘুষ ও তদবির ছাড়া পুলিশে নিয়োগ ২৩৯ জনের
শামিম আকন্দের বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। তিনভাইয়ের মধ্যে ছোট সে। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচ এসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বড় দুই ভাই ঢাকায় লেখাপড়া করে নিজেরা টিউশনি করে। মা সাজেদা বেওয়া বাড়িতে মুরগি পালন করে সংসার চালানো ছাড়াও শামিমের লেখাপড়ার খরচের যোগান দেন।
শিবগঞ্জ উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের কুড়াহার গ্রামে পাঁচ শতাংশ ভিটে মাটি ছাড়া আর কোনো জমিজমা নেই তাদের। আগামী ১৭ জুলাই শামিমের এইচ এসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। এর আগেই বুধবার (১০ জুলাই) রাতে পুলিশে নিয়োগ পরীক্ষার প্রকাশিত ফলে শামিম কনস্টেবল পদে চূড়ান্ত নিয়োগ পান। শামিমের মতো দরিদ্র পরিবারের সন্তান দুপচাঁচিয়া উপজেলার রিফাত হোসেন, শিবগঞ্জের এরশাদুল, নন্দীগ্রামের রাবেয়া, বগুড়া সদরের বিথি খাতুন, সোনাতলার তানিয়া, কাহালুর ফারহানা পুলিশে চাকুরি পেয়েছেন মাত্র ১০৩ টাকা খরচ করে।
এদের কারো বাবা নেই, কারো বাবা বিছানায় শয্যাশায়ী। আবার কারো বাবা দিন মজুরের কাজ করে। এই দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরাই পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরি পেলেন কোনো প্রকার ঘুষ কিম্বা তদবির ছাড়াই।
বুধবার (১০ জুলাই) রাত ১১টায় বগুড়া পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে প্রার্থীদের উপস্থিতিতে চূড়ান্ত নিয়োগ প্রাপ্ত ২৩৯ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। এসময় নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
ফল ঘোষণাকালে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ বিপিএম উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন যাদের চাকরি হয়েছে কিম্বা যাদের চাকরি হয়নি তাদের কারো কাছ থেকে যদি কেউ কৌশলে অথবা প্রতারণা করে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে থাকে তাহলে অভিযোগ করলে সেই টাকা ফেরত নিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। পরে নিয়োগ প্রাপ্তদের জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
পুলিশ সুপার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ২৩৯ পদের বিপরীতে এবারই স্মরণকালের সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থী অর্থাৎ ৬৩২১ জন প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় অংশ নেয়। সেখান থেকে বাছাই করে ১৬৬৫ জনের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেন ৬২৭ জন। এই ৬২৭ জনের মধ্যে ২৩৯ জন চূড়ান্ত নিয়োগ পান।
তিনি বলেন, নারী, পুরুষ সাধারণ মেধা কোটা ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা, পোষ্য ও এতিম কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত প্রত্যেকেই চাকরি পেয়েছেন নিজ নিজ যোগ্যতায়। গত জুলাই থেকে শুরু হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া বুধবার রাতে চূড়ান্ত ফল ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হলো।