ডুবে যাওয়া মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে বাবার মৃত্যু

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, বগুড়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নিখোঁজ শিশুকে উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ডুবুরিরা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

নিখোঁজ শিশুকে উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ডুবুরিরা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

চার বছরের মেয়ে কিরন বালা আর ছয় বছরের ভাতিজা অপুর্ব ওরফে বুদাকে ঘাড়ে নিয়ে এবং পাঁচ কেজি ওজনের মাছ ধরা জাল ও বালতি নিয়ে সাতঁরে করতোয়া নদী পার হচ্ছিলেন চন্দন। নদীতে তেমন স্রোত ছিল না। বন্যার পানিও কমে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু মাঝ নদীতে গিয়ে এতকিছু সামাল দিতে পারেননি তিনি।

মেয়ে কিরনবালা পা ফসকে বাবার পিঠ থেকে ডুবে যায় করতোয়ার পানিতে। মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে ভাতিজা বুদাও হাতছাড়া হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে সঙ্গে থাকা জালে জড়িয়ে যান বাবা-মেয়ে। ফলে আপ্রাণ চেষ্টা করেও চন্দন নিজেও বাঁচতে পারেননি, বাঁচাতে পারেননি মেয়ে কিরন বালা ও ভাতিজা বুদাকে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন যখন বাবা-মেয়েকে উদ্ধার করে তখন দেখা যায় দুজনেই জালের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের চন্ডিজান গ্রামে এভাবেই নদীতে ডুবে মারা যান বাবা-মেয়ে। নিখোঁজ আরেক শিশু বুদার সন্ধান পাওয়া যায়নি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। গ্রামের শত-শত মানুষ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নদীতে নেমে এবং নৌকা দিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজে করতোয়া নদীর দুই কিলোমিটার জুড়ে।

আব্দুল হামিদ নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, 'করতোয়া নদী ঘেঁষা গ্রাম চন্ডিজান। সেখানকার বাসিন্দা চন্দন, কাজ করেন শেরপুর পৌর শহরে সাউদিয়া পার্কে। বৃহস্পতিবার ছিল তার ছুটি। এ কারণে তৌড়া জাল দিয়ে মাছ ধরার মেয়ে এবং ভাতিজাকে নিয়ে মাছ ধরতে যান। মাছ ধরা শুরু করার আগেই নদীর পূর্ব পাশ থেকে পশ্চিম পার্শ্বে সাতঁরে পার হচ্ছিলেন।'

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, 'আমি চন্দনকে সব কিছু নিয়ে নদীতে নামতে দেখেছি। কিন্তু নদীর তীরে বাড়ি এবং দক্ষ সাঁতারু চন্দন ডুবে মারা যাবে তা ভাবতে পারেননি। ছোট ছেলেরা তাদের ডুবে যাওয়া দেখে গ্রামে খবর দেয়। এরপর গ্রামের লোকজন নদীতে নেমে সন্ধান করতে থাকে। কিন্তু ততক্ষণে বাবা-মেয়ে জালে পেঁচিয়ে মারা যান। চন্দনের ভাতিজাও ডুবে যায় নদীতে।'

এদিকে এক বাড়িতে একজন নিখোঁজ এবং দুই মৃত্যুর ঘটনায় পুরো গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কান্নার রোল উঠেছে চন্ডিজান হিন্দুপাড়ায়। আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে চন্দনের স্ত্রী আর নিখোঁজ বুদার বাবা-মার আর্তনাদে। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না কেউই। গ্রামের মানুষগুলো এক সঙ্গে নেমেছ নদীতে, তল্লাশি করে যাচ্ছেন দুপর থেকে।

শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার রতন হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফো.কম-কে বলেন, 'ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তল্লাশি অব্যাহত রেখেছেন। রাজশাহী থেকে আসা ডুবুরিরা কাজ শুরু করেছন।'