গণধর্ষণের পর থানায় বিয়ে, রোববার প্রতিবেদন দেবে তদন্ত কমিটি
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গঠন করা তদন্ত কমিটি শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) টানা তিন ঘণ্টা তদন্ত করেছে পাবনায় গণধর্ষণের পর থানার ভেতরে ধর্ষিতার সঙ্গে ধর্ষকের বিয়ের ঘটনায়। এ দিন দুপুর থেকে পাবনা সদর উপজেলার সাহাপুর যশোদল গ্রামে গণধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধুর বাবার বাড়ি যান তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
তদন্তকালে ভুক্তভোগী নারী, তার পরিবার এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে কমিটির সদস্যরা। পরে তারা পাবনা সদর থানা পরিদর্শন করেন। তদন্ত শেষে রোববার বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানা যায়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে পাবনা জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিতে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহেদ নেওয়াজ, পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবনে মিজান ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. একেএম আবু জাফর রয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ওরফে ঘন্টুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহেদ নেওয়াজ গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বেশ লম্বা সময় নিয়ে ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টদের কথা শুনেছি। তিনি বলেন, ঘটনার আরেকস্থল পাবনা সদর থানা। সেখান থেকেও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কমিটির আহবায়ক।
কমিটির সদস্য সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবনে মিজান বলেন, ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর মামলার অভিযুক্ত ৫ আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্যাতিত নারীর ডাক্তারি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশী তদন্ত হলেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গঠিত কমিটির তদন্ত চলছে। এবনে মিজান বলেন, আমাদের বেঁধে দেওয়া সময় আগামিকাল রোববার শেষ হবে। এ সময়ের মধ্যেই জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। জেলা প্রশাসক তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে সেটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনে উপস্থাপন করবেন বলে জানান তদন্ত কমিটির এ সদস্য।
এবনে মিজান গণমাধ্যমের কাছে বলেন, থানার ভেতরে ধর্ষিতার সঙ্গে ধর্ষকের বিয়ের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ইতোমধ্যেই পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবাইদুল হককে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া উপ-পরিদর্শক একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলমান রয়েছে।
এদিকে গণধর্ষণের ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে শরিফুল ইসলাম ঘন্টুকে পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কোনো দায় কোনোভাবেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেবে না। ঘৃণিত এমন কাজের বিষয়ে কোনো ধরণের সহানুভূতি দেখানোর প্রশ্নই আসে না।
প্রসঙ্গত, আগস্টের ২৭ তারিখ রাতে পাবনা সদর উপজেলার সাহাপুর যশোদল গ্রামের তিন সন্তানের এক জননী ওই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। এ সময় রাসেলসহ তার অপর দুই বন্ধু তাকে এক বন্ধুর বাড়িতে আটকে রেখে পালাক্রমে করে ধর্ষণ করে। ঘটনার পরদিন ধর্ষণের শিকার ওই নারী স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ওরফে ঘন্টুর শরণাপন্ন হয়ে তার কাছে বিচার চান। পরে ঘন্টু ও তার কয়েক বন্ধু মিলে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে আটকে রেখে তিন দিন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সেখান থেকে ওই নারী পালিয়ে বাবার বাড়িতে গিয়ে সব খুলে বলে। ৫ সেপ্টেম্বর ওই নারীকে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন রাতে ওই নারী পাবনা সদর থানাতে অভিযোগ দিতে আসলে পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে উল্টো ধর্ষক রাসেলকে ডেকে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসলে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে মামলার ৫ আসামিকে পুলিশ পর্যায়ক্রমে গ্রেফতার করে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওসিকে প্রত্যাহার ও এক এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একইসঙ্গে পুলিশের তদন্ত কমিটির পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়।